বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে তরুণ প্রজন্ম

তখনো সূর্যের দেখা মেলেনি। এর মধ্যে ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ভিড়। বাস, মাইক্রোবাসসহ অসংখ্য গাড়ি। সড়কের অর্ধেক অংশজুড়ে অভিভাবকদের ভিড়। কলেজের ছোট ফটক দিয়ে সারি বেঁধে প্রবেশ করছে শিক্ষার্থীরা। যেন স্কুল বা কলেজ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে তারা।

গতকাল শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ের সামনের এই দৃশ্য ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ও প্রথম আলো ময়মনসিংহ আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াডের আগের। গতকাল দিনভর ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব। ১৭তম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ২ জন শিক্ষার্থী। তৃতীয় শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মোট ৪টি ক্যাটাগরিতে ভাগ হয়ে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

উৎসবে ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এস এম সফিকুল হায়দার বলেন, বাংলাদেশ সার্বিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। গণিত উৎসবও সেই এগিয়ে যাওয়ার একটি স্মারক। বাংলাদেশের মেধাবী তরুণ প্রজন্ম গণিত উৎসবে অংশ নিয়ে সারা বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। এ ধরনের একটি আয়োজনের জন্য তিনি ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান।

সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণিত উৎসব। বন্ধুসভার সদস্যরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অধ্যক্ষ এস এম সফিকুল হায়দার। জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখার ব্যবস্থাপক আনোয়ার উদ্দিন খান মাহমুদ আর আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ভেন্যু প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ সৈয়দ মোশাররফ হোসেন।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আনোয়ার উদ্দিন খান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক জিতে আনছেন। এটা আমাদের জন্য আনন্দের। এ ধরনের একটি ভালো কাজের অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্ববোধ করি।’

পরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সময় মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ পর্বে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিদীপ্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আমন্ত্রিত অতিথি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাথমেথিকস ডিপার্টমেন্টের বিভীয় প্রধান মো. আবদুল হাই, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবদুল আলীম, ভেন্যু প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এস এম সফিকুল, ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এখলাস উদ্দিন খান ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াডে স্বর্ণজয়ী জওয়াদ।

প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে ফলাফলের জন্য অপেক্ষায় থাকার সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মঞ্চ মাতান ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বন্ধুরা। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন। উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। পুলিশ কর্মকর্তা আবুল মোমেন এ পর্বে বক্তব্য দেন। বিকেলে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। চারটি পর্বে মোট ১১০ জন বিজয়ী হয়। তারা জাতীয় গণিত উৎসবে অংশ নেবে। বিজয়ীদের মেডেল ও টি-শার্ট পরিয়ে দেওয়া হয়। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল ময়মনসিংহ বন্ধুসভা।