'বড় ভাই'-এর খোঁজে পুলিশ

>
  • সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা
  • হত্যাকারীদের ভিডিও ও নথি ধরে চিহ্নিত করেছে পিবিআই
  • দ্রুত আইনের আওতায় আনতে চায়।
সুদীপ্ত বিশ্বাস
সুদীপ্ত বিশ্বাস

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে হত্যার ধারণ করা ভিডিও ও মামলার নথিপত্র (কেস ডকেট) ধরে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ প্রায় শেষ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পেটানোর ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুদীপ্ত মারা যান। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসী এবং গডফাদারের নাম ও পরিচয় পেয়ে গেছে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। পিবিআই বলেছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানাধীন নালাপাড়ার বাসায় হানা দিয়ে সুদীপ্তকে ঘুম থেকে তুলে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে সন্ত্রাসীরা। এরপর তাঁকে কয়েকজন সন্ত্রাসী বেদম পেটায়। মেডিকেলে নেওয়া হলে সুদীপ্তকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

পিবিআই সূত্র জানায়, থানা–পুলিশ থেকে মামলার নথি সংগ্রহ করে এবং ভিডিও ধরে গোটা ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং নির্দেশদাতার নাম–পরিচয়সহ সবকিছু জানা গেছে। ফলে যেকোনো সময়ে পিবিআই অভিযানে নামবে।

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈন উদ্দীন এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, নথি ও ভিডিও অনুযায়ী মামলা গোছানোর কাজ প্রায় শেষ। এই খুনের ঘটনায় বড় ভাই বা ছোট ভাই, যারাই জড়িত সবাই চিহ্নিত হয়েছে। কিছু আসামি কারাগারে আছে।

মঈন উদ্দীন আরও বলেন, ‘সুদীপ্তের খুনিদের ধরতে “জিরো টলারেন্স” নিয়ে তদন্ত করতে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা যত শক্তিধর ‘বড় ভাই’ হোক, তদন্তে নাম এলে রেহাই নেই। এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা কেবল সময়ের ব্যাপার।’

পিবিআই সূত্র জানায়, সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় বড় ভাইসহ ১৫-১৬ জনের নাম এসেছে। ভিডিওতে ধারণ করা পেটানোর দৃশ্যে নওশাদ সাদা শার্ট পরিহিত, ফয়সল নীল গেঞ্জি, শিপন নীল-সাদা গেঞ্জি পরিহিত ছিলেন। ১৬৪ ধারায় নওশাদ ও শিপনের নাম আসেনি। তাঁরাও আসামি হবেন। ভিডিওটি মোক্তারের আইফোন থেকে পুলিশ সংগ্রহ করেছে। অথচ ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দীতে মোক্তার নওশাদ ও শিপনের নাম গোপন রেখেছিলেন। আর পাপ্পুর জবানবন্দীতে বড় ভাই প্রসঙ্গটি আসে। কিন্তু বড় ভাইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

সুদীপ্ত প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। ফেসবুকে মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরীকে (বর্তমানে শিক্ষা উপমন্ত্রী) নিয়ে ফেসবুকে কুৎসা রটানো হলে সুদীপ্ত প্রতিবাদ করে জবাব দেন। এ কারণে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা সুদীপ্তকে খুন করে। হত্যাকারীরাও আওয়ামী লীগের কিছু নেতার আশ্রয়–প্রশ্রয়ে থাকেন বলে অভিযোগ ওঠে।

পিবিআই সূত্র জানায়, হত্যাকারীদের বেশির ভাগ চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকায় বাস করছেন। গত ২৯ জানুয়ারি লালখান বাজারের ইস্পাহানি মোড়ে পুলিশের সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) অনুষ্ঠানে চার চিহ্নিত সন্ত্রাসী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আইনুল কাদের, মো. জাহেদ ও মাঈন উদ্দিনের নাম সুদীপ্তের হত্যাকারী হিসেবে দুই আসামির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এসেছে।

সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় আদালতে ফয়সল আহমেদ ওরফে পাপ্পু এবং মোক্তার হোসেন ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি দেন। একজন বড় ভাইয়ের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে আদালতে স্বীকার করেন তাঁরা। কিন্তু সেই বড় ভাই কে তা বের করতে আগ্রহী ছিল না সদরঘাট থানা–পুলিশ।

বর্তমানে আসামি পাপ্পু ও মোক্তারসহ ছয়জন এখন কারাগারে। তবে বড় ভাইসহ আরও কিছু ব্যক্তিকে আড়াল করার চেষ্টার কারণে সুদীপ্তের বাবাসহ অনেকেই থানা–পুলিশের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যে কারণে সুদীপ্তের বাবা মেঘনাদ বিশ্বাস তদন্তকারী সংস্থা পরিবর্তন করতে গত বছরের ৮ অক্টোবর আদালতে আবেদন করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, রাজনৈতিক কারণে সুদীপ্ত খুন হন। পুলিশ সুষ্ঠু তদন্তে মনযোগী হবে বলে একাধিক নেতা আশা করছেন।

নিহত সুদীপ্তের বাবা মেঘনাদ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিবিআই ঘটনাটি তদন্ত করছে। আমি আশাবাদী গডফাদারসহ সবাই আইনের আওতায় আসবে। আমি ছেলে হত্যার বিচারের আশায় আছি। মৃত্যুর আগে ছেলের খুনিদের কঠিন শাস্তি দেখে যেতে চাই।’

আরও পড়ুন