'কমনসেন্স হোক আরও কমন'

সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবির উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘হ্যাশট্যাগ কমনসেন্স’ কর্মসূচি। ছবি: শুভ্র কান্তি দাস
সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবির উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘হ্যাশট্যাগ কমনসেন্স’ কর্মসূচি। ছবি: শুভ্র কান্তি দাস

ডিজিটাল জীবনধারা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রাত্যহিক জীবনে দেখা দিচ্ছে নানা সামাজিক সমস্যা। হরহামেশাই দেখা যায়, মুঠোফোনে অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা, জোরে কথা বলা, রাস্তা পার হওয়া কিংবা গাড়ি চালানোর সময় মুঠোফোনে ব্যস্ত থাকা; পাশের জনের সঙ্গে কথা বলার সময় মনোযোগ মুঠোফোনে দেওয়ার মতো ঘটনা। এসব সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে শুরু হয়েছে ‘হ্যাশট্যাগ কমনসেন্স’ কর্মসূচি। এর স্লোগান—‘কমনসেন্স হোক আরও কমন’।

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশানের স্প্রেকটা কনভেনশন সেন্টারে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ডিজিটাল সেবা নেওয়ার সময় কোন কোন বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত, সে বিষয়গুলো তুলে ধরতেই এই প্রচারাভিযান শুরু করছে প্রতিষ্ঠানটি।

‘হ্যাশট্যাগ কমনসেন্স’ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছবি: শুভ্র কান্তি দাস
‘হ্যাশট্যাগ কমনসেন্স’ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছবি: শুভ্র কান্তি দাস

এই প্রচারাভিযান উদ্বোধন করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বায়নের যে হাওয়া, তা আমাদের দেশেও লেগেছে। মুঠোফোন, ইন্টারনেট এসেছে। এখন প্রযুক্তির আরও উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সবাই প্রস্তুত হচ্ছে। এখানে বলা হয়েছে, প্রযুক্তি আমাদের গতি দিয়েছে, জ্ঞান দিয়েছে, অনেক সুবিধাও দিয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে কিছু কিছু অপকারও করেছে। আমরা প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে পারি। দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে করিও।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, ‘ফরাসি লেখক ভলতেয়ার বলেছেন, কমনসেন্স খুব কমন নয়। এই কথা সত্য। আমরা যেসব উদাহরণ ভিডিওতে দেখলাম, সেখান থেকে বলা যায়, এই যে মুঠোফোন যারা ব্যবহার করে, তারা অসতর্ক থাকে। এই অসতর্কতার ফলে নিজের জীবন বিপন্ন করে, পরিবার ও অন্যের জীবনও বিপন্ন করে। রবি একটি দায়িত্বশীল টেলিকম প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাজের প্রতি তাদের দায় থেকে মানুষকে সচেতন করবে। এ জন্য রবিকে অভিনন্দন। এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি কাজ এবং সামাজিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।’

অনুষ্ঠানে তিনটি সচেতনতামূলক ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওগুলোয় সত্যতা যাচাই না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট শেয়ার করা, শিশুদের মুঠোফোন ব্যবহারের সময় খেয়াল না রাখা এবং গাড়ি চালানোর সময় মুঠোফোন ব্যবহার করার মতো ভুলগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

‘হ্যাশট্যাগ কমনসেন্স’ কর্মসূচি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। ছবি: শুভ্র কান্তি দাস
‘হ্যাশট্যাগ কমনসেন্স’ কর্মসূচি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। ছবি: শুভ্র কান্তি দাস

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা যে সমাজে বাস করি, সেখানে কাণ্ডজ্ঞান একটা বিরাট সমস্যা। প্রত্যেকেই নানা রকম অভ্যাসগত, অস্থিরতার কারণে ভুলত্রুটি করি। রাস্তাঘাটে আমরা জোরে কথা বলি মুঠোফোনে, অফিসেও আমরা এসব নানা কাণ্ডজ্ঞানের অভাবে অপ্রীতিকর কাজ করি। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করেছে, তবে কাণ্ডজ্ঞানের দিকটাও দুশ্চিন্তার। সেদিক থেকে সামাজিক সচেতনতা, কাণ্ডজ্ঞান, বোধ, বুদ্ধিবৃত্তি, সাধারণ জ্ঞান—এগুলো খুবই জরুরি। এগুলো শিখতে হয়, জানতে হয়, বোঝার চেষ্টা করতে হয়। রবি আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়টা যে সামনে এনেছে, এগুলো আমাদের ভাবাচ্ছে। কিশোর-তরুণদের যদি এসব বিষয়ে বুঝিয়ে আনতে পারি, তাহলে হয়তো অনেকটাই ভালো হবে। তবে এগুলো খুব কঠিন। মানুষ পরিবর্তন করা কঠিন, অভ্যাস পরিবর্তন করা আরও কঠিন।’

অনুষ্ঠানে রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যদি সচেতন না হয়ে থাকি, তাহলে তা কী ধরনের ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে, সে বিষয়ে ভিডিও তিনটিতে দেখানো হয়েছে। আমাদের যুবসমাজই দেশের ভবিষ্যৎ। সেই ভবিষ্যৎ আমরা কীভাবে গড়ে তুলব—সে উপলব্ধি থেকে এই উদ্যোগ।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী, রবির করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের প্রধান সাহেদ আলম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবীর প্রমুখ।