ট্রাকচাপায় ভাইবোন খুন: ১৭ দিনেও ট্রাকচালক গ্রেপ্তার হয়নি

আফরিন আক্তার ও আফসার নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কেরানীগঞ্জে সম্প্রতি মানববন্ধন হয়েছে।
আফরিন আক্তার ও আফসার নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কেরানীগঞ্জে সম্প্রতি মানববন্ধন হয়েছে।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ভাইবোনকে ট্রাক চাপা দিয়ে খুন করার মামলার ১৭ দিন পার হলেও ট্রাকচালক কিংবা তাঁর সহযোগীদের ধরতে পারেনি পুলিশ।

নিহতদের বাবা শামসুল আলম বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রাকচালক ইচ্ছা করে আমার চোখের সামনে ট্রাক চাপা দিয়ে বাচ্চাদের খুন করে ফেলল। অথচ এত দিন পার হয়ে গেল, পুলিশ কাউকে ধরতেই পারল না।’

তবে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ট্রাকচালকসহ অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। অচিরেই আসামিরা ধরা পড়বে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
গত ২৮ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মোল্লারপুলে ট্রাকচাপায় নিহত হয় আফরিন আক্তার (১৩) ও আফসার (১১)।

এ ঘটনায় বাবা শামসুল আলম বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ট্রাকচালক নবীন হাওলাদার (৩৩) এবং অজ্ঞাতনামা চালকের দুই সহকারীর (হেলপার) বিরুদ্ধে খুনের মামলা করেন। আফরিন ও আফসার কেরানীগঞ্জের কসমোপলিটন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। আফরিন পড়ত পঞ্চম শ্রেণিতে আর আফসার পড়ত তৃতীয় শ্রেণিতে।

বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরাও
বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরাও

মামলার এজাহারে বলা হয়, সেদিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় কসমোপলিটন স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে যোগ দেয় আফরিন ও আফসার। অনুষ্ঠান শেষে বাবার মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরছিল তারা। মোটরসাইকেলটি যখন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নতুন রাস্তা সংযোগ সড়কে আসে, তখন পেছন থেকে একটি ট্রাক বারবার হর্ন দেয়। কিন্তু ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের নির্মাণকাজ চলায় রাস্তা সরু হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাইড দিতে পারেননি। মোটরসাইকেলটি যখন প্রিয় প্রাঙ্গণ প্রজেক্টের সামনে আসে, তখন পেছন থেকে ট্রাকটি ধাক্কা দেয়।

বাদী শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, পেছন থেকে ধাক্কা দিলে তাঁর ছেলে ও মেয়ে দুজনই ট্রাকের সামনে সিটকে পড়ে। ট্রাকটি না থেমে তাঁর সন্তানদের দেহের ওপর দিয়ে চালিয়ে চলে যায়। কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুরের একটি তেলের পাম্পে ট্রাকটি রেখে এর চালক নবীন হাওলাদারসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। আদালত সূত্র বলছে, পুলিশ ওই ট্রাক জব্দ করে আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে।

নিহত আফরিন আক্তার ও আফসার। ছবি: সংগৃহীত
নিহত আফরিন আক্তার ও আফসার। ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসায়ী শামসুল আলমের তিন সন্তান। ট্রাকচাপায় খুন হয়েছে তাঁর বড় মেয়ে আফরিন ও মেজ ছেলে আফসার। বেঁচে আছে কেবল তিন বছর বয়সী ছেলে রাফসান।

আফরিন ও আফসার ট্রাকচাপায় নিহত হলে ট্রাকচালক ও তাঁর সহকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি করে কেরানীগঞ্জের কমপক্ষে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকাবাসী মানববন্ধনে অংশ নেন।

এত কিছুর পরও ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার না হওয়ায় চরম হতাশ শামসুল আলম। তিনি বললেন, ‘মামলা করলাম। ট্রাকচালকের নাম দিলাম। কিন্তু পুলিশ ধরতে পারছে না। ট্রাকচালক ইচ্ছা করে আমার সন্তানদের খুন করেছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুনসুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই খুনের মামলার আসামি ট্রাকচালক নবীনকে ধরার জন্য তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালে অভিযান চালিয়েছি।’