'নির্বাচন কমিশন 'প্রহসনের' কমিশন'

শাহদীন মালিক
শাহদীন মালিক

নির্বাচনকে কমিশনকে ‘প্রহসন’ কমিশন বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের এই নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা সম্পূর্ণ চলে গেছে। এটাকে আমরা প্রহসন কমিশন বলতে পারি।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় শাহদীন মালিক এ কথা বলেন। ‘একাদশ সংসদ ‘নির্বাচন: পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি।

শাহদীন মালিক বলেন, ‘তথাকথিত (নির্বাচন) কমিশন যে নির্বাচনের আয়োজন করবে, এটা আর কোনো অর্থেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। তাদের গত দুই বছরের কর্মকাণ্ডে আমাদের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে, তারা একটি প্রহসন কমিশন। তারা ভালো কথা বলেই যাবে যে এত ভালো নির্বাচন দেশে আগে কখনো হয়নি, কখনো হবে না। এটা তাদের প্রহসনের বহিঃপ্রকাশ।’

সভাপতির বক্তব্যে শাহদীন মালিক বলেন, এই ধরনের নির্বাচন করে দেশের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হলো, দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে দেশে মুদ্রাস্ফীতি হবে, দেশের অর্থ পাচার হবে এবং দেশে কোনো বিনিয়োগ হবে না।

আইনজীবী মালিক বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিকভাবে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হচ্ছি। এর থেকে বের হওয়ার প্রধান উপায় একটা অর্থপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। এর জন্য কী করতে হবে, তার জন্য রকেট উত্থাপন করতে হবে না। এটা জানা আছে। আলাপ-আলোচনা করে একটা অর্থবহ নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে।’

সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো উদাহরণ বাংলাদেশে নেই, মন্তব্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘নির্বাচন বাংলাদেশে কখনোই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়নি। সরকারি দলের অধীনে একটা কর্তৃত্বের নির্বাচনের ধরন আমরা দেখি। ১৯৮৮ সালে, ১৯৯৬ সালে, ২০১৪ সালে আমরা ভোটারহীন নির্বাচন দেখেছি। কিন্তু ২০১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে, তা সব দিক থেকে সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে।’

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আলোকচিত্রী শহীদুল আলম বলেন, ‘অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে, কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে কেমন লাগছে? তখন প্রথমেই মনে হয় এটা মুক্তি না। যে দেশে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার থাকে না, সেটা মুক্তি না। আমি না হয় হাজত থেকে বেরিয়েছি। কিন্তু আমরা কেউই মুক্ত না।’

শহীদুল আলম আরও বলেন, ‘আমি একজন স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আমার সংবিধান আমাকে যে অধিকার দেয়, তা প্রত্যেকের অধিকার, তা বহন করে আমার যা দরকার, যেভাবে দরকার তা আমি বলব। তাতে যদি আর কারও সমস্যা থাকে, সেটা সে বুঝুক। সেটা নিয়ে আমার কেন ভয়ে থাকতে হবে?’

আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। লিখিত বক্তব্যে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেভাবে গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করা হয়েছে এবং মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে, তাতে মানুষের মনে এখনো গভীর ক্ষত, হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। নির্বাচনকালে দেশীয় গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে না পারলেও নির্বাচনী কারচুপি নিয়ে বিদেশের অনেক শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে গুরুতর প্রশ্ন তোলা হয়েছে।’

আলোচনা সঞ্চালনা করেন নারীপক্ষের সভানেত্রী শিরীন হক। আরও বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আইনজীবী হাসনাত কাউয়ুম প্রমুখ।