চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ২ জনের সনদ স্থগিত, ১ জনের ছাত্রত্ব বাতিল

ভর্তি জালিয়াতি, ছিনতাই, মারধরসহ একাধিক অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার, দুই শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত ও এক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির সভায় বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে অবস্থান নিষিদ্ধ ও একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

যেসব ঘটনায় বহিষ্কার
গত বছরের ১ মার্চ নগরের সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিভু দাশগুপ্তের হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ ফাহিম জাফরি। ভর্তি জালিয়াতির এ ঘটনায় তাঁকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আমানত হলের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে ল্যাপটপ, মোবাইল ও অর্থ ছিনতাইয়ের ঘটনায় রসায়ন বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমানকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উসকানি ও প্ররোচনার দায়ে পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ইমরান নাজির ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জিয়াউল হক মজুমদারকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলে অর্থনীতি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের এমদাদুল হক এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের ফাহিম হাসানকে মারধরের ঘটনায় চার শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বীপায়ন দেব ও সাব্বিরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের অর্ণব বড়ুয়া ও আরবি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সের অবৈধ ব্যবহার ও মেডিকেলের কর্মচারীদের হুমকি দেওয়ার কারণে অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী এইচ এম হাসানুজ্জামানকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটে দুই শিক্ষার্থীর মোবাইল টাকা ছিনতাই ও তাঁদের মারধরের ঘটনায় ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো.সাব্বির হোসেনকে এক বছর ও অর্থনীতি বিভাগের মো. মামুনুর রশিদকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে সাব্বিরকে গত বছর সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় দুই মাস বহিষ্কার করা হয়েছিল।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির কারণে বাংলা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মো. জামশেদুল কবির ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেনের সনদ স্থগিত ও আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন শিকদারকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাঈন নেওয়াজের ছাত্রত্ব স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত বছরের ১৪ এপ্রিল জঙ্গি সন্দেহে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো. আজফার হোসেনকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে আজফারকে সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিঠির জবাব না দেওয়ায় তাঁর ওই বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।