ওয়াহেদ ম্যানশনের দোকানে আটকা পড়েন বিল্লাল

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিল্লাল হোসেন শ্রমিকের কাজ করতেন পুরান ঢাকার চকবাজারের ওয়াহেদ ম্যানশনের একটি ডেকোরেটরের দোকানে। বুধবার কাজ শেষ করে রাতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল বিল্লাল হোসেনের। আগুন ছড়িয়ে পড়লে ভবনের ওই দোকানে আটকা পড়েন তিনি। পরের দিন সেখান থেকে তাঁর পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত বিল্লাল শরীয়তপুরের গ্রামচিকন্দি গ্রামের আদাল উদ্দিন চৌকিদারের ছেলে। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর স্ত্রী ও ১০ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে ঢাকার লালবাগ এলাকার শহীদবাগে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

বিল্লালের চাচা সুলতান হোসেন বলেন, সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বিল্লাল। তাঁর করুণ মৃত্যুতে স্ত্রী-সন্তান পাগলপ্রায়। ঢাকার আজিমপুরে লাশ দাফন করা হয়েছে।

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা গলিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের একজন ওমর ফারুক (৩৫)। ছুটি পেলেই বাড়িতে আসার কথা ছিল ওমর ফারুকের। কারণ, মাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ফারুকের বাবা করিম মাতবর এখন বিলাপ করছেন আর বলছেন, ‘বাবা তো আর বাড়ি আসল না, আর আসবও না। পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। আল্লাহ কেন এমন করলা? অর মারে কী জবাব দিমু?’

ওমরের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চল চরআত্রা মুন্সিকান্দি গ্রামে। করিম মাতবরের ছেলে মুফতি ওমর ফারুক মুন্সিগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছেন। ঢাকার বড়কাটরা এলাকায় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। গত বুধবার রাতে কাজ শেষে ফেরার পথে চকবাজারের চুড়িহাট্টা গলিতে আটকা পড়েন। উদ্ধারকর্মীরা সেখান থেকে তাঁর পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে গ্রাম থেকে এসে পরিবারের সদস্যরা তাঁর লাশ শনাক্ত করেন। বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁর লাশ মামাবাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের দীঘিরপাড় গ্রামে দাফন করা হয়।

মুন্সিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদ মুন্সি বলেন, ‘ছেলেটি অনেক ভালো ছিল। তার দুই বছর বয়সী একটি শিশুকন্যা রয়েছে। সে প্রায়ই আমার কাছে আসত। এভাবে সে মারা যাবে, কল্পনাও করতে পারিনি। তার মৃত্যু মানতে পারছি না। খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে যাই। লাশ এনে দাফন করি।’

ওমর ফারুক ও বিল্লাল হোসেনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে মাতম করছেন পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনেরা।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শরীয়তপুরের দুজনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। সরকার ঘোষিত সব অনুদান তাঁদের পরিবার পাবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ওই দুজনের পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা দেবে।