অধ্যক্ষকে লক্ষ্য করে গোবর

নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো
নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামের ওপর গতকাল শনিবার ময়লা ও চেয়ার ছুড়ে মেরেছে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেছেন তিনি।

এদিকে অধ্যক্ষের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাতে কলেজের শিক্ষক পরিষদের জরুরি সভা হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আজ রোববার থেকে তিন দিন পাবলিক পরীক্ষা ছাড়া কলেজের সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ১৮টি অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে কলেজে আন্দোলন শুরু করা হয়। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। গত ২৩ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীরা অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চায়। একপর্যায়ে অধ্যক্ষকে অন্য কোনো কলেজে চলে যেতে বলা হয়। এরপর থেকে গত পাঁচ মাস তিনি কলেজে যেতে পারেননি।

অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেই গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ মাস ঢাকায় বসে কলেজের আর্থিক ও নীতিনির্ধারণী কাজগুলো সম্পন্ন করেছি। আমার অনুপস্থিতিতে দাপ্তরিক ও অন্যান্য কাজ করছেন উপাধ্যক্ষ। আজকের (গতকালের) এই হামলা করা হয়েছে আমাকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য, যেন আমি আর কলেজে না আসি।’

হামলার পর অধ্যক্ষের কার্যালয়। ছবি: প্রথম আলো
হামলার পর অধ্যক্ষের কার্যালয়। ছবি: প্রথম আলো

গত শুক্রবার প্রথম আলোয় ‘পাঁচ মাস ধরে কলেজে যেতে পারেন না অধ্যক্ষ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর গতকাল এই বিষয় নিয়ে ‘অধ্যক্ষের নির্বাসন: সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়ানুগ সমাধান চাই’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে প্রথম আলো।

কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে টুপি ও মুখোশ পরা পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত হঠাৎ করে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে। পাঁচ মাস পর কলেজে এসে অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম তাঁর কার্যালয়ে কাজ করছিলেন। এ সময় কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন খানও ওই কক্ষে বসা ছিলেন। দুর্বৃত্তরা কক্ষে ঢুকেই বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়। গালিগালাজ করতে করতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অধ্যক্ষকে লক্ষ্য করে বালতি ভর্তি গোবর ও ময়লা ছুড়ে মারে তারা। দুর্বৃত্তদের একজন তাঁকে লক্ষ্য করে চেয়ারও ছুড়ে মারে। এতে অধ্যক্ষের শার্ট-প্যান্ট ভিজে যায় এবং ডান চোখের পাশে আঘাত পান। সাখাওয়াত হোসেন খানের গায়েও ময়লা লাগে। অধ্যক্ষের চিৎকার শুনে অন্য শিক্ষকেরা এগিয়ে যাওয়ার আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

হামলার পর অধ্যক্ষের কার্যালয়। ছবি: প্রথম আলো
হামলার পর অধ্যক্ষের কার্যালয়। ছবি: প্রথম আলো

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পাঁচ মাস ধরে যা চলেছে, তা এককথায় নজিরবিহীন ও লজ্জাজনক। কলেজের একজন অধ্যক্ষ নিরাপত্তার ভয়ে কলেজে আসতে পারবেন না, এটা হতে পারে না। গতকালের ঘটনাটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসে স্থানীয় সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামকে নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসেন। তিনি বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করেন কিন্তু সমাধান হয়নি।

কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শিব্বির আহমেদ বলেন, ‘কে বা কারা এই ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে, তা আমাদের জানা নাই। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। পাঁচ মাস পর অধ্যক্ষ কলেজে আসবেন—বিষয়টি আমাদের আগে জানানো হলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’