বিচারিক তদন্ত, ক্ষতিপূরণসহ নানা আরজিতে তিন রিট

রাজধানীর চকবাজারে ভায়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিচারিক কমিশন গঠন ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ কয়েক দফা নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী আবেদনকারী হয়ে আজ রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক তিনটি রিট করেন। এসব রিটের ওপর আগামীকাল সোমবার হাইকোর্টের পৃথক বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।

এদিকে প্রায় নয় বছর আগে নিমতলীর অগ্নিদুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে করা এক রিটের ধারাবাহিকতায় আজ রোববার একটি সম্পূরক আবেদন করেছে তিনটি সংগঠন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট ওই সম্পূরক আবেদনটি করে। এতে সম্পূরক রুল চাওয়ার পাশাপাশি আবাসিক ভবনে অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও বিপজ্জনক রাসায়নিক ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংরক্ষণ করা চিহ্নিত ৩৬০টি কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

তিনটি সংগঠনের আইনজীবী সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিমতলীর দুর্ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি ১৭ দফা সুপারিশ করে। সুপারিশে ঘনবসতি ও আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা সরিয়ে নেওয়া, অনুমোদনহীন কারাখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক দ্রব্যের মজুত বা বিপণন না করার বিষয় ছিল। সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবার চকবাজরে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। ওই ১৭ দফা বাস্তবায়ন বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে আবেদনে। চলতি সপ্তাহে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

সম্পূরক আবেদনে নিমতলীর অগ্নিদুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের গোডাউন বা কারখানা বসানোয় লাইসেন্স বা অনাপত্তিপত্র প্রদানে নিষেধাজ্ঞা কেন নিশ্চিত করা হবে না, এ মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। চকবাজার অগ্নিদুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারসহ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান ৬৭ জন। আহত হন আরও অনেক। ঘটনার চার দিনের মাথায় আজ উচ্চ আদালতে সম্পূরক আবেদন ও পৃথক তিনটি রিট করা হলো।

চকবাজারের অগ্নি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিচারিক কমিশন গঠন ও ক্ষতিগ্রস্ত আহত-নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। বিষয়টি জানিয়ে পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রিটে ওখানে থাকা কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে সোমবার রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।

এদিকে রাজধানীর বিশেষত পুরান ঢাকাসহ ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা থেকে অবিলম্বে রাসায়নিক ও বিস্ফোরকদ্রব্য সরানোর নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট হয়েছে বলে জানান রিট আবেদনকারীর আইনজীবী সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে আই খান পান্না আবেদনকারী হয়ে রিটটি করেছেন। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।

এ ছাড়া নিমতলী ও চকবাজারের অগ্নিদুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নূর মুহাম্মদ আজমী ও খন্দকার সায়েদুল কাউসার একটি রিট করেন। পরে রিট আবেদনকারী নূর মুহাম্মদ আজমী প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের উৎপাদন, ব্যবহার, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণে বিশেষ আইন ও নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়েছে। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে সোমবার রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।