প্রাণনাশের হুমকিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের খরচ কে দেবে?

গুরুত্বপূর্ণ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের দৈনন্দিন ব্যয় কে বহন করবে তা এখনো স্পষ্ট করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। ২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি পরিবীক্ষণ শাখা থেকে জারি করা এক চিঠিতে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। এ চিঠির সূত্রপাত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের একটি সাক্ষাৎকার।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব তৌহিদ ইলাহীর সই করা চিঠিতে প্রাণনাশের হুমকিপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের দৈনন্দিন থাকা খাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দায় হিসেবে পরিগণিত হবে কি না তা যাচাই করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে জানাতে বলা হয়। চিঠিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠানো হয়।

‘আমার জীবনটা জেলখানার মতো’—বলেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি মারা যান চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি। সেদিনই ‘আমার জীবনটা জেলখানার মতো’ শিরোনামে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে। এই সাক্ষাৎকারে নিজের আয়ের উৎস নিয়ে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বলেছিলেন- ‘আমার যত সঞ্চয় ছিল, এই ছয় বছরে সব শেষ। গত মাসে উত্তরায় আমার যে তিন কাঠা জমি ছিল, সেটাও বিক্রি করে দিয়েছি। যেহেতু আমরা অনেক লোক একসঙ্গে থাকি, ছয়জন পুলিশ, ওদের দেখাশোনা করা, খাওয়াদাওয়া করতে বাবুর্চি লাগে। আমরা বাবা-ছেলে দুইটা রুমে থাকি। পুলিশ সদস্যরা থাকে ড্রয়িংরুমে। আমি কোনোভাবে ৩৫ হাজার টাকা ঘরভাড়া দিয়ে চলছি। সবকিছুর বিল আছে। আমাদের সবার জন্য প্রতিদিন কাঁচাবাজারই লাগে এক হাজার টাকার। মাসে সব মিলিয়ে দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। গান গেয়ে এক কোটি টাকা জমিয়েছিলাম। ছয় বছরে জমানো টাকা শেষ। সম্মানের সঙ্গে যাতে বাঁচতে পারি, তাই জমিটাও বিক্রি করে দিয়েছি, যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয়।’

চিঠিতে সাক্ষাৎকারের এই অংশটুকু তুলে ধরে বলা হয়—সাক্ষাৎকারটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের থাকা খাওয়ার বিষয়টি তিনি নিজে বহন করতেন।

আজ রোববার দুপুরে টেলিফোনে সিনিয়র সহকারী সচিব তৌহিদ ইলাহী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এ বিষয়ে কোনো আপডেট বা অগ্রগতি জানতে পারিনি। চিঠিটি খুব বেশি দিন আগেও পাঠানো হয়নি। জননিরাপত্তা বিভাগে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য শীঘ্রই আবার তাগিদ দেব। আমরাও ক্লিয়ার না, আসলে এই দায়টা কার।’

তবে বাড়িতে সরকার থেকে পুলিশি নিরাপত্তা পাওয়া ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. এম এ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই কমিটির সূত্রে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করার ফলে বৈশ্বিক সমর্থন পাই। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের তালিকা প্রকাশের পর আমার বাড়িতে হামলা হয়। তখন বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থার পক্ষ থেকেই আমার প্রাণনাশের হুমকির উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য চিঠি পাঠানো হয়। ২০০৮ সাল থেকে নিয়মিত আমার বাড়িতে পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন। এই সদস্যদের পেছনে এক টাকা খরচেরও বাধ্যবাধকতা নেই। বর্তমানে ছয়জন সদস্য রাতদিন দায়িত্ব পালন করছেন। মাঝে মাঝে দায়িত্বরত পুলিশের সংখ্যা নয়জনও ছিল। এই সদস্যদের জন্য খাবার নিয়ে গাড়ি আসে। শিফট শেষ হলে একদল চলে যান, আরেক দল আসেন। বাড়িতে কেউ থাকলে চা বা অন্য কিছু খাওয়ানোর যে বিষয় তা আমার নিজের ইচ্ছা। এতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’

ডা. এম এ হাসান বলেন, যে ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য এই পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হবে ওই ব্যক্তিকেই যদি তার খরচ বহন করতে হয়, তবে তা হবে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (প্রোটেকশন) হামিদা পারভীন পিপিএম প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের দায় কেন ওই বিশিষ্ট ব্যক্তি বহন করবেন? সরকার থেকে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়, এই সদস্যদের খরচ সরকার বহন করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক অনুশাসনে হাউজগার্ড হিসেবে এই সদস্যদের জন্য একটি কক্ষের বা গার্ডরুম শুধু ওই ব্যক্তি ব্যবস্থা করবেন বলে বলা হয়েছে।