জোয়ারে চলে, ভাটায় বন্ধ

নদী দখল ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব পাশে অবস্থিত নৌপথ শুকিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের কাছে কুহেলিয়া নদী নামে পরিচিত লোনাপানির এই খাল দিনদিন ভরাট হচ্ছে। এতে জোয়ারের সময় ওই খালের ওপর দিয়ে কোনো রকমভাবে নৌ-চলাচল করলেও ভাটার সময় তা বন্ধ থাকে। নৌপথটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌ-চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি মাছ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলেরাও।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘কুহেলিয়া নদীর’ পশ্চিম পাশে মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়ন। স্থানীয় বাসিন্দারা কম খরচে এই নৌঘাট থেকে যাত্রীবাহী নৌকায় সাগরপথে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করেন। এই নৌপথে ব্যবসায়ীরা পণ্য আনা–নেওয়াও করেন। পাশাপাশি নদীর তীরে বসবাসকারীরা ওই নদী থেকে মাছ শিকার করে তাঁদের সংসার চালান।

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া থেকে শুরু হয়ে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারজুড়ে লোনাপানির এই খাল প্রবাহিত হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, মাতারবাড়ীতে ১২ শ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ড্রেজার বসিয়ে সাগর থেকে বালু তোলা হচ্ছে। ড্রেজারের কাদামিশ্রিত মাটি ফেলা হচ্ছে পূর্ব পাশের কুহেলিয়ায়। প্রায় দেড় বছর ধরে কাদামাটি ফেলার কারণে দিন দিন পানির প্রবাহ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে বন্ধ রয়েছে পানি চলাচলের তিনটি স্লুইসগেট। এতে মাতারবাড়ী ইউনিয়নের বর্ষার পানি সরাসরি কুহেলিয়ায় পড়তে পারছে না। এসব কারণের পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল ও পাড় দখলের কারণেও ভরাট হচ্ছে কুহেলিয়া।

গতকাল শনিবার সকালে আটটায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাতারবাড়ী ইউনিয়নের রাজঘাটের সামনে ভাটার সময় পুরোপুরি শুকনো কুহেলিয়া। এ কারণে আটকা পড়েছে অন্তত ২০টি লবণবোঝাই নৌকা। আর পানি না থাকায় মাছ শিকার করতে পারছেন না জেলেরা।

রাজঘাট এলাকার বাসিন্দা নবির হোছাইন বলেন, কুহেলিয়া দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে মাছ শিকারিদের জালে আগের মতো সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়ছে না। এখন এই নৌপথে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধেরও উপক্রম হয়েছে। এ সুযোগে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা চর দখল করে চিংড়িঘের নির্মাণ করছে। ফলে আরও ভরাট হচ্ছে খালটি।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের উন্নয়নকাজের প্রভাবে কুহেলিয়া ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর ভাটার সময় মাছ শিকার তো দূরের কথা, নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মাছ শিকার করতে না পেরে অভাব–অনটনে দিন কাটছে এই এলাকার জেলেদের।

ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, প্রকল্পের কারণে ভরাট হচ্ছে ‘নদী’। এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা ভাটার সময় নৌপথে চলাচল করতে বেশ কষ্ট পাচ্ছে। তাই ‘কুহেলিয়া নদী’ জরুরিভিত্তিতে খনন করা প্রয়োজন।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিডেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহমুদ আলম বলেন, শুধু তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রভাবে নদী ভরাট হয়েছে এটা বলা যাবে না। নানা কারণে এই নদী ভরাট হতে পারে। তাই নৌ-চলাচলের সুবিধার্থে শিগগিরই ‘কুহেলিয়া নদী’ খননের কাজ শুরু করা হবে।