লালমনিরহাটে সাত বিদ্রোহী নিয়ে আ.লীগে অস্বস্তি

দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পরও লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার মধ্যে চারটিতেই আওয়ামী লীগের সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এসব বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে আগামী ১০ মার্চ লালমনিরহাট জেলার সদর, কালীগঞ্জ, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে কালীগঞ্জ বাদে বাকি উপজেলাগুলো থেকে সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই করবেন।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সবচেয়ে বেশি লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মোতাহার হোসেনের নিজ উপজেলা হাতীবান্ধায়। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত হোসেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বদিউজ্জামান ভেলু, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সরওয়ার হায়াত খান, হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর হোসেন ও হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান।

বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সরওয়ার হায়াত খান বলেন, ‘আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সরকারি হাতীবান্ধা আলীমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। নির্বাচন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে এর আগে সংবাদ সম্মেলন করেছি। সব ধরনের গ্রহণযোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আমার এলাকার ভোটারসহ জনগণের অনুরোধে সাড়া দিয়ে আমি এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হব।’

হাতীবান্ধা উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আমার গ্রহণযোগ্যতা ও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেই আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’

পাটগ্রামে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ওয়াজেদুল ইসলাম।

আদিতমারীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক ইমরুল কায়েস। ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আমার বাবা সামছুল ইসলাম ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় খুন হন। আমি রাজনৈতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত একটি পরিবারের সন্তান। আমি এর আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হই। আমি পরাজিত হলেও জনগণকে ছেড়ে যাইনি। আমি আশা করেছিলাম, আমাকে সার্বিক বিচারে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেটা না হওয়ায় জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল হক পাটোয়ারী। তিনি লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান সুজন।

কামরুজ্জামান সুজন বলেন, ‘আমি লালমনিরহাট-৩ আসনের সাংসদ আবু সালেহ মোহাম্মদ সাঈদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় থেকে এই উপজেলার জনগণের সুখ-দুঃখ, সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে অবহিত হয়েছি। তাঁদের আগ্রহকে সম্মান দেখিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভোট হলে আমি বিজয়ী হব।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল হক পাটোয়ারী বলেন, ‘আমি ১৮ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি একবার এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এবার নৌকা মার্কা পেয়েছি। আমি বিজয়ী হব ইনশা আল্লাহ।’

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গোকুন্ডা ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, দলের নির্দেশ অমান্য করে যাঁরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে দলের উচ্চপর্যায় থেকে যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত একজন, জাতীয় পার্টির একজন ও স্বতন্ত্র হিসেবে একজন; আদিতমারীতে আওয়ামী লীগের একজন, জাতীয় পার্টির একজন ও স্বতন্ত্র একজন; কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগের একজন, জাতীয় পার্টির একজন ও ইসলামী ঐক্যজোটের একজন; হাতীবান্ধায় আওয়ামী লীগের একজন, স্বতন্ত্র চারজন এবং পাটগ্রামে আওয়ামী লীগের একজন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একজন।