তাঁদের ভীষণ কষ্টের জীবন

মনোরঞ্জন দাস ও তাঁর তিন সন্তান। ছবিটি শনিবার বিকেলে তোলা।  প্রথম আলো
মনোরঞ্জন দাস ও তাঁর তিন সন্তান। ছবিটি শনিবার বিকেলে তোলা। প্রথম আলো

নয় সদস্যের পরিবারের চারজনই খর্বাকৃতির। স্বাভাবিকভাবে তাঁরা কাজকর্ম করতে পারেন না। নানান প্রতিকূল পরিস্থিতি ও অভাবে দিন কাটছে পরিবারটির।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার উত্তর ঘিওর গ্রামের মনোরঞ্জন দাস (৬০) নিজেও খর্বাকৃতির। সাত সন্তানের মধ্যে জন্মগতভাবে দুই মেয়ে ও এক ছেলেও খর্বাকৃতির। সমাজের নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে দরিদ্র মনোরঞ্জনের পরিবারের।

মনোরঞ্জন দাস জানান, জন্মগতভাবে তিনি বেঁটে (খর্বাকৃতির) হয়ে জন্মান। তিন মেয়ে ও চার ছেলের মধ্যে রিক্তা রানি দাস (২৫), বিথী রানি দাস (২২) ও ছেলে রতন কুমার দাস (১৯) জন্মগতভাবে বেঁটে। তাই বিয়ের বয়স হলেও দুই মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। আর বড় মেয়ে বেলী রানি দাস (২৭) স্বাভাবিক হলেও বিয়ে হয় না।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, জনাকীর্ণ ঘিওর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কের পাশে ছোট একটি টংঘর। সেই ঘরে পান-সিগারেট ও বিস্কুট বিক্রি করছেন রতন। দোকানটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানালেন তিনি। তিনি জানান, বাবার অভাবের সংসার। সংসারে বাবাকে সহযোগিতার জন্য পাঁচ বছর আগে ঘিওর সরকারি কলেজের সামনে এই টং দোকান করতেন। তবে সেখানে বেচাকেনা কম হওয়ায় এক বছর ধরে ঘিওর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কের পাশে দোকানটি বসিয়েছেন। আর ঘিওর হাট-বাজারের জায়গা ইজারা নিয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকানপাট করেছেন। তবে দোকানের জন্য জায়গা ইজারা নেওয়ার মতো টাকা তাঁর নেই। প্রতিবন্ধী হিসেবে বাসস্ট্যান্ডের দোকানের এই জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

কথা হয় ঘিওর ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে ওই জায়গায় প্রতিবন্ধী রতনকে দোকান করতে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই ঘিওর হাট-বাজার এলাকায় অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে। রতনের দোকানও উচ্ছেদ হতে পারে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলে রতনকে দোকানের জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়া হবে।

রতনের বাবা মনোরঞ্জন দাস ঘিওর সরকারি কলেজের সামনে বাদাম বিক্রি করেন। শনিবার তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি ছাপরাঘরে ৯ সদস্যের পরিবারকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। পরিবারের চারজন প্রতিবন্ধী, ভাতা পান দুজন।

মনোরঞ্জন দাস জানান, প্রতিবন্ধী হওয়ায় মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছেন না। ছোট দুই ছেলে পড়াশোনা করে। অর্থের অভাবে অন্য সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারেননি। বাদাম বিক্রি করে এত বড় সংসার চলে না। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাঁর ছেলে রতনকে দোকান করার জন্য বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কের পাশে ছোট জায়গা দেয় উপজেলা প্রশাসন। তবে ইজারার জায়গা না হওয়ায় সেখান থেকে দোকান উচ্ছেদ করা হবে বলে শুনেছেন। এ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

স্থানীয় ঘিওর ইউপির চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে ঘর নির্মাণ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যাদের জমি আছে ঘর নেই, তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রম শুরু করেছেন। পর্যায়ক্রমে তিনিও (মনোরঞ্জন) পাবেন।

জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারটিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।