ভাঙ্গুড়ায় এক ছাত্রকে পেটানোর অভিযোগ তুলে তুলকালাম

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রূপসী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রকে পেটানোর অভিযোগ তুলে স্থানীয় লোকজন গতকাল মঙ্গলবার বিদ্যালয়টিতে ঢুকে দিনভর অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন এবং শিক্ষকদের নাজেহাল করাসহ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির মুখে ফেলেন। মারমুখী লোকজন শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে বিদ্যালয় থেকে বের করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয় লোকজন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বিদ্যালয় থেকে তিনজন বহিরাগত ছাত্র এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পরীক্ষার নির্ধারিত দিন ছিল। এর আগের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র ইকলাস রহমানের সঙ্গে ওই তিন ছাত্রের দেখা হয়। তারা ইকলাসের কাছে ১৮ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা বিষয়ে জানতে চাইলে ইকলাস তাদের ভুল তথ্য দেয়। এতে নির্ধারিত দিনে ওই তিন ছাত্র পরীক্ষা দিতে পারেনি। পরে শিক্ষকেরা তাদের ডেকে এনে আলাদা করে পরীক্ষা নেন। পরে গত সোমবার ইকলাস বিদ্যালয়ে এলে সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেদুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ তার কাছে বিষয়টি জানতে চান। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজ্যমূলক আচরণ করে। এর একপর্যায়ে ইকলাসকে সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ বেত্রাঘাত করেন। শিক্ষকের পিটুনিতে আহত ইকলাসকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, এলাকায় সোমবার বিকেলে এ খবর জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন শিক্ষকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গতকাল সকালে এলাকাবাসী দল বেঁধে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন শিক্ষকদের বের করে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। খবর পেয়ে ভাঙ্গুড়া থানা-পুলিশের একটি দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখানকার স্থানীয় লোক না। এটাই আমর সমস্যা। বিদ্যালয়ে কেরানি পদে একটি নিয়োগ নিয়ে স্থানীয় একটি চক্র আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। সেই রাগ থেকেই আমাদের মারপিট করা হয়েছে। বিদ্যালয় থেকে বের করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কিছু করার ছিল না। আমরা অসহায়ের মতো বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছি।’
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, মূলত ঘটনা আগের দিনের। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছেন, শিক্ষার্থীও শিক্ষককে পিটিয়েছে। এরই জের ধরে গতকালের ঘটনা ঘটে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কোনো ঝামেলা হয়নি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, পুরোনো ক্ষোভ থেকেই ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। এরপর যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই নেবে।’