নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন দরকার

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তাঁর বাঁয়ে নাসের এজাজ, ডানে রাশেদা কে চৌধূরী ও সেলিমা আহমাদ। গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তাঁর বাঁয়ে নাসের এজাজ, ডানে রাশেদা কে চৌধূরী ও সেলিমা আহমাদ। গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো

উন্নয়নের পথে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি বাড়ছে নানা ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ। তবে দেশের সব শ্রেণির নারীর ক্ষমতায়ন এখনো হয়নি। এর জন্য নারীর সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দরকার পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন ও সর্বাত্মক সমর্থন। উন্নত রাষ্ট্র গড়তে সব শ্রেণির নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নও জরুরি।

গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘সমতায় সমৃদ্ধি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন নীতিনির্ধারকসহ নারী সংগঠক ও উদ্যোক্তারা। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহযোগিতায় এই বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সমাজে সমতার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পুরুষদের সমর্থন। নারীর পাশে দাঁড়াতে তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। সরকার হয়তো আইন করবে, কিন্তু আইন করে তো সব হয় না। পুরোনো চিন্তা-চেতনা বাদ দিয়ে সবাইকেই সমান ভাবতে হবে। কারণ, সমতাতেই সমাজে সমৃদ্ধি আসবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেলে উদ্যোক্তা হয়ে নারীরা অনেক কিছু করতে পারেন। তাই নারীদের সুযোগ দেওয়া দরকার।

নারী-পুরুষের সমতার কথা সারা বছর বলতে হবে বলে উল্লেখ করে সাংসদ ও বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সেলিমা আহমাদ বলেন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। নেতৃত্বের জায়গাগুলোতে নারীকে কাজ করতে হবে। নারীর জন্য ঘরে ও বাইরে সহায়ক পরিবেশ যত দিন না হবে, তত দিন সমতা আসবে না।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, গত এক দশকে দেশে সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। এর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ নারীর ক্ষমতায়নের। দেশে নারী নেতৃত্ব বেড়েছে, অগ্রগতি হচ্ছে। করপোরেট খাতেও নারীরা আসছেন। তবে দেশের সব শ্রেণির নারীর ক্ষমতায়ন এখনো হয়নি। এর জন্য মানসিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে।

ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ওপর জোর দেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিটপী দাশ চৌধুরী। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন কে এম হাবিব উল্লাহ বলেন, গ্রামের নারীদের কর্মজীবনে যেতে অনীহা ও বাধা আছে। তাঁদের ঘরে রেখেই কীভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়, এর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

নারীর ঘরের কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী। তিনি বলেন, শুধু বাইরে নয়, নারীর ঘরের কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়নও করা দরকার।

মাল্টিমোড গ্রুপের সহসভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল নারীদের জন্য পৃথক একটি ব্যাংক গঠনের সুপারিশ করেন।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার ইক্যুইটির ব্যবস্থাপক কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, কৃষিকাজে নারীর অংশগ্রহণ বেশি হলেও তাঁদের স্বীকৃতি কম দেওয়া হয়। নারী-পুরুষের সমতায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক বলে মন্তব্য করেন নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভি চ্যানেলের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহ্‌নাজ মুন্নী। উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ঘরের নানাবিধ নির্যাতনের কারণে নারীরা মানসিকতা হারিয়ে ফেলেন। নারী নির্যাতন না কমালে যত অগ্রগতি হোক না কেন, নারীর ক্ষমতায়ন শূন্যই থেকে যাবে।

জাতীয় ক্রীড়াবিদ ও উদ্যোক্তা শিরিন সুলতানা বলেন, ক্রীড়াক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীরা এগিয়ে আছেন। ১২তম সাফ গেমসে ৭৫টি পদকের মধ্যে নারীরা পেয়েছেন ৩৯টি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আয়েশা বানু বলেন, বাল্যবিবাহ, সহিংসতা, নারীর উচ্চশিক্ষা থেকে কর্মজীবনে উত্তরণ—সমাজে সমতা আনতে এগুলো বড় চ্যালেঞ্জ। নারীকে বাইরে আসতে হবে, তেমনি পুরুষকেও ঘরের কাজে অংশ নিতে হবে। বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, তৈরি পোশাক খাতে অংশ নিয়ে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শাহরুখ রহমান বলেন, শুধু শহুরে নারীদের কথা ভাবলে হবে না, গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়নের কথাও ভাবতে হবে।