'ওয়াহেদ ম্যানশন' এখনই ভাঙতে হবে না

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি তোলা ছবি।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি তোলা ছবি।
>
  • ওয়াহেদ ম্যানশনের ক্ষতিগ্রস্ত কলাম ও বিম ফেলে দিতে হবে
  • নতুন করে মজবুত করতে হবে 
  • এক মাসের মধ্যেই করা উচিত

গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত চারতলা ‘ওয়াহেদ ম্যানশন’ এখনই ভাঙতে হবে না। শুধু ভবনের বিভিন্ন তলার ক্ষতিগ্রস্ত কলাম, বিম—এসব পুরোপুরি বদলে নতুন করে মজবুত (রেট্রোফিটিং) করতে হবে। তবে পুরো ভবনটি সম্পূর্ণ নিরাপদ কি না, সে অবস্থা জানার জন্য বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে বিস্তারিত প্রকৌশলগত মূল্যায়ন করা জরুরি। এটা এক মাসের মধ্যে করা উচিত।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। ওয়াহেদ ম্যানশন ছাড়া পার্শ্ববর্তী ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ পেশ করার জন্য অগ্নিকাণ্ডের পরদিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এই কমিটি গঠন করে। সাত কর্মদিবসের পর আজ রোববার কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে পেশ করবে।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে বিস্ফোরণ ও আগুনের কারণে ওয়াহেদ ম্যানশনের কলাম ও বিমের যেসব অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো পুরো ফেলে দিতে হবে। এরপর নতুন করে রড ও কংক্রিটের ঢালাই করে মজবুত করতে হবে। কমিটি সুপারিশ করেছে ভবিষ্যতের জন্য ভবনটি কতটা নিরাপদ—সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পুরো ভবনটির একটি বিস্তারিত প্রকৌশলগত মূল্যায়ন (ডিটেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট–ডিইএ) করতে হবে। এটা করতে হবে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে পুরো ভবনের সব কলাম, বিম, স্ল্যাব ভালো করে পরীক্ষা করে। এটা করা না হলে পুনরায় মজবুতকরণের নকশা করা সম্ভব হবে না। ওয়াহেদ ম্যানশনের পার্শ্ববর্তী চারটি ভবন বাহ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলোরও পলেস্তারা পরিবর্তন ও কিছু কলামের অংশবিশেষ মজবুত করতে হবে।

তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়িটি রাখা যাবে কি যাবে না—এ বিষয়ের তদন্ত করেছি আমরা। এটা “রেট্রোফিটিং” করতে হবে, কারণ বাড়ির অনেক বিম ও কলামে ক্র্যাক আছে। ভবনটি ঠিক আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিইএ (বিস্তারিত প্রকৌশলগত মূল্যায়ন) করতে হচ্ছে। যেহেতু এখানে মানুষ থাকবে।’

তিনি জানান, ওয়াহেদ ম্যানশনের পার্শ্ববর্তী চারটি বাড়ির বড় সমস্যা নেই। সামান্য মেরামতে কাজ হবে।

কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকৌশলগত মূল্যায়নের জন্য (ডিইএ) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিআরটিসি, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন হাউস বিল্ডিং রিসার্স ডিপার্টমেন্ট বা অভিজ্ঞ কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ দিয়ে এক মাসের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।

চকবাজারের চুড়িহাট্টার এ জায়গায় নয়তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য ১৯৯৫ সালে নকশার অনুমোদন দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে চারতলা পর্যন্ত করার পর আর তলা বাড়ানো হয়নি।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম। গতকাল তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী ছাড়াও অন্য সদস্যরা হলেন বুয়েটের অধ্যাপক ইশতিয়াক আহমেদ, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান, ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও জাফর আহম্মেদ, ডিএসসিসির প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম, রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আলম, অথরাইজ কর্মকর্তা নুরুজ্জামান জহির এবং ডিএসসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুন্সী আবুল হাসেম।

চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয় থেকেও ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তবে ওই কমিটি এখনো রিপোর্ট পেশ করেনি। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের পর ২১ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকায় প্রতিটি রাস্তা ও বাড়িঘরের তালিকা করার জন্য একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেয় রাজউক।