কাদেরের জন্য সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল ঢাকায়

ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি
ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঢাকায় এসেছে। আজ রোববার রাত পৌনে আটটার দিকে চিকিৎসক প্রতিনিধিদল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পৌঁছায়। চিকিৎসক প্রতিনিধিদলে চিকিৎসক ছাড়া নার্সও আছেন।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরপরই সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকেরা ওবায়দুল কাদেরের পরিস্থিতি বুঝতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন।

এর আগে বিএসএমএমইউর দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওবায়দুল কাদের এখনো শঙ্কামুক্ত নন। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা না গেলে তাঁর অবস্থা নিয়ে কিছু বলাও যাবে না। অসুস্থ হওয়ার পর কাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।

রোববার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি গণমাধ্যমকে জানান চিকিৎসকেরা। এর আগে অসুস্থ ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ হাসপাতালে যান।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী আহসান বলেন, এনজিওগ্রাম করে দেখা যায় যে তাঁর তিনটি আর্টারি ব্লক হয়ে গেছে। তাঁর আগে থেকে থাকা ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত ছিল। এর মধ্যে খুব বেশি পরিমাণ ব্লক যেটা ছিল যেটাকে এলইডি বলে সেটিকে খুলে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খুলে দেওয়ার পর তিনি সত্যিই দুই ঘণ্টা ভালো ছিলেন। এরপর তাঁর রক্তচাপ আবার কমে যায়। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়। এরপর নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁর প্রেসার নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র লাগানো হয়।

অধ্যাপক আলী আহসান বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের এখন চোখ খুলছেন। কথা বলছেন। কিন্তু ক্রিটিক্যাল স্টেজই (জটিল অবস্থা) এখনো আছে বলব।’

অধ্যাপক আহসান বলেন, এখন যে অবস্থায় আছে সেটা যদি কিছুক্ষণ স্থায়ী থাকে, তবে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলবে। নয়তো আর যে দুটি ব্লক আছে সেগুলো খুলে দিতে বাইপাস করা হতে পারে। এটা সময়সাপেক্ষ সিদ্ধান্ত।

অধ্যাপক আলী আহসান বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাবে না। এখনো উনি ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন। এ জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।’

অসুস্থ ওবায়দুল কাদেরকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে কি না? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আলী আহসান বলেন, এ অবস্থায় পাঠালে তাঁর স্থিতিশীল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। যাঁরা নিতে আসবেন, তাঁরা এসে যদি মনে করেন তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া যায়, তবেই সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসে ডাক দেওয়ার পর তাঁর (কাদের) চোখের পাতা মিটমিট করছিল। আর রাষ্ট্রপতি এসে ডাক দেওয়ার পর তিনি চোখ বড় করে তাকিয়েছিলেন। সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এসে ডাক দেওয়ার পরও তিনি চোখ খোলেন।

কার্ডিওলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অসিত বরন বলেন, ‘স্টেনটিংয়ের পর (রিং পরানো) তিনি ভালো ছিলেন। পরে কিছুটা খারাপ অবস্থা হয়। তবে চোখ বন্ধ করা অবস্থা থেকে চোখের পাতা নড়া অবস্থায় পৌঁছেছেন। তিনি ধীরে ধীরে উন্নতি করছেন। তবে আমরা এখনো এক শ ভাগ বলতে পারব না উনি শঙ্কামুক্ত।’

ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে আসা প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনা ছিল কি না? প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা যদি মনে করেন তাঁকে বিদেশ নেওয়া যাবে, তখনই নেওয়া হবে। তাঁরা যদি প্রয়োজন মনে না করেন বা পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে তাঁকে পাঠানোর পরিস্থিতি নেই, তবে পাঠানো হবে না।