হারতে চান না সাংবাদিক লাইলী

সাংবাদিক লাইলী বেগম। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
সাংবাদিক লাইলী বেগম। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন

জেলা শহর বা মফস্বল এলাকায় সাংবাদিকতা করা কঠিন কাজ। আর এই কাজ করেই একজন নারীকে যদি সংসারের সব খরচ সামলাতে হয়, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতে হয়, তবে তা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

তবে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক লাইলী বেগম এই চ্যালেঞ্জটাকে হাসিমুখেই গ্রহণ করেছিলেন। মেয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন সম্প্রতি। আর ছেলে সোনালী ব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন। হাঁপ ছেড়ে জীবন উপভোগ করার কথা ছিল লাইলী বেগমের। তবে তা হয়নি। এখন লাইলী বেগমকে নিয়ে ছেলেমেয়েসহ শুভাকাঙ্ক্ষীদের দম ফেলার সময় নেই।

বৈশাখী টেলিভিশন, ডেইলি অবজারভার ও মানবকণ্ঠের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লাইলী। দায়িত্ব পালন করছেন উদীচীর কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।
গত ১৭ জানুয়ারি থেকে লাইলী জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। তাঁর অসুখের নাম সার্ভিক্যাল মাইয়েলোপ্যাথি। প্রায় আড়াই বছর আগে দরিদ্র পরিবারের জন্য একটি গরু কিনে আরেক সহকর্মীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে শহরে ফেরার সময় দুর্ঘটনায় লাইলী মেরুদণ্ডে ব্যথা পেয়েছিলেন। তারপর চিকিৎসা করে ভালোও হন। বলতে গেলে ব্যথার কথা ভুলেও গিয়েছিলেন। তবে ভিডিও ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে কাজ করার সময় আবার ব্যথা অনুভব করেন। এ ব্যথার জন্য তাঁকে কুড়িগ্রাম, রংপুর হয়ে ঢাকায় আনা হয় চিকিৎসার জন্য। এর মধ্যে লাইলীকে হাসপাতালের আইসিইউ থেকেও ঘুরে আসতে হয়েছে। এই কদিনে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। মেরুদণ্ড, ঘাড় ও হাতের ব্যথা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। কিন্তু একা বসতে পারেন না। ডান হাতে কিছু করতে পারেন না। কারও সহায়তায় বসার পরই ব্যথা শুরু হয়।

আজ রোববার রাজধানীর বছিলায় বাসায় গিয়ে কথা হয় লাইলী বেগমের সঙ্গে। ছেলে চাকরি পাওয়ার পর বাসা নিয়েছেন। বোনকে সঙ্গে এনে রেখেছেন যাতে চাকরি খুঁজে পেতে সহজ হয়। তবে এর মধ্যেই মায়ের অসুস্থতা সব এলোমেলো করে দিয়েছে। রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর লাইলী বেগম ছেলের বাসায় উঠেছেন। তবে বিছানা থেকে নামতে পারেন না বলে বাসার চারপাশ দেখা হয়নি। শুধু শুয়ে ছাদ দেখতে হয়। আর বাম হাতেই চলে মোবাইলে সবার সঙ্গে যোগাযোগ।
লাইলী বেগমের কথাতেই স্পষ্ট, তিনি দমে যাওয়ার মানুষ নন। তাই বর্তমানের প্রায় অবশ হয়ে আসা ডান হাত দিয়েই আবার ভিডিও ক্যামেরা চালাতে চান। ল্যাপটপে সংবাদ লিখতে চান। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন দিল্লি।  বহুমুখী সংগ্রাম করেই এ পর্যন্ত এসেছেন লাইলী।
সাংবাদিকতার জন্য দেশসেরা রাঁধুনি কীর্তিমতী নারী, উপজেলা-জেলা পর্যায়ে জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন। পাক্ষিক অনন্যার অনন্যা শীর্ষদশ অর্থাৎ ২০১৮ সালের সেরা দশের মধ্যে লাইলীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে সম্প্রতি। আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়নি এখনো। লাইলী প্রথম আলোর সালমা সোবহান ফেলো। প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা হিসেবেও কাজ করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও তিনি যুক্ত। কাজ করেন অসহায় মানুষের জন্য।
লাইলীর এবারের সংগ্রামটা আর একার নেই। দিল্লিতে গিয়ে জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালেই থাকতে হবে দুই মাস। এর বাইরে অন্যান্য খরচ তো আছেই। অস্ত্রোপচারের পর অবস্থা জটিল হলে খরচের পরিমাণ বাড়তে থাকবে।
তবে লাইলী বেগমের এবারের সংগ্রামে এগিয়ে এসেছেন বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। লাইলীর বাবা অসুস্থ। ভাইবোন থাকলেও সেভাবে সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। গণমাধ্যমে কর্মরত অনেকেই লাইলী বেগমকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন। যে যাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে এসেছেন বলেই লাইলী বেগম দিল্লি গিয়ে অস্ত্রোপচার করার কথা চিন্তা করতে পারছেন।
কিন্তু চিকিৎসা শুরুর পর শুধু টাকার অভাবে যাতে থেমে না যায় সেই চিন্তা করছেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা। আর এ জন্যই তাঁরা সামর্থ্যবান এবং বিবেকবান মানুষদের লাইলীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের তৎপরতা দেখেই লাইলী শুয়ে শুয়েই ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এরপরও যদি হেরে যাই, বন্ধুরা হেরে যাবে। বন্ধুদের জন্য জিতে যাওয়ার তাগিদ বোধ করছি।’
আরেক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘নিজের কাঁধটা কখনো এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে ভাবিনি। ছোটবেলা থেকেই কত্তো কত্তোজনের ভার এই কাঁধটাতে তুলে নিয়ে পোক্ত করেছি...আজ নিজের ভার নিতে এই কাঁধ চরমভাবে ব্যর্থ। সারা জীবন ভার টানা কুলিও একদিন অন্যের কাঁধে চড়ে চরম অসহায়ত্বে।’

লাইলী বেগমকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে: যমুনা ব্যাংকের SWIFT code JAMUBDDH, বিকাশ অ্যাকাউন্ট ০১৭১২৬৩৩২৩৭ অথবা ০১৭৮৫৪২৮২১১ এবং
Laili Begum, Account Name Laili Begum Acount No- 048-310004352, Jamuna Bank, Rangpur Branch,
অথবা Laili Begum, Account No.012212100027095, Brance name.Rangpur, Mercantile Bank Limited এ হিসাব নম্বরে অর্থ পাঠাতে পারেন।