বগুড়ার সেই মতিনের অবৈধ সম্পদ জব্দের নির্দেশ

মতিন সরকার
মতিন সরকার

বগুড়ায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা আবদুল মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদ জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ‘ফ্রিজ’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১৭ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার জ্যেষ্ঠ স্পেশাল জজ নরেশ চন্দ্র সরকার এই আদেশ দেন।

এর ফলে আবদুল মতিন সরকার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ আদালতের নির্দেশ ছাড়া অন্য কারও কাছে হস্তান্তর এবং ব্যাংকে রাখা অর্থ কোথাও স্থানান্তর করতে পারবেন না।

১১ ফেব্রুয়ারি দুদক মতিনের সম্পদ ক্রোকের আবেদন করে। আবেদন আমলে নিয়ে আদালত এই নির্দেশ দেন। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বগুড়ার তুফান সরকার ও তাঁর ভাই মতিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বগুড়ার সমন্বিত দুর্নীতি দমন কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় এ মামলা করেন।

তুফান বগুড়ার আলোচিত এক ধর্ষণ মামলা কারাগারে রয়েছেন। আর তাঁর ভাই মতিন সরকার বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁকে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট বহিষ্কার করা হয়।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে উল্লেখ করা হয়, তুফান সরকারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। এরপর ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানো হয়। ওই মাসেই দুদকে ৯১ লাখ ৭০ হাজার টাকার স্থাবর ও ৩৮ লাখ ৯ হাজার ১৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেওয়া হয়। সম্পদ যাচাই করে দুদক তুফানের জমি, বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংকে সঞ্চয়সহ ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকার মূল্যের সম্পদের সন্ধান পায়। দুদকে জমা দেওয়া নথিতে তুফান ২৯ লাখ ৭৯ লাখ ৮৭০ টাকার মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গোপন করেছেন।

তাঁর আয়ের বৈধ কোনো উৎসও নেই। তিনি কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিল কিংবা কোনো খাতের আয় প্রদর্শন ও আয়কর পরিশোধ করেননি। মতিন সরকারের স্ত্রী তাসনিম সরকারেরও কোনো আয়ের উৎস নেই। তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৫ টাকা অর্জন করার প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক। পরে দুদক আইন ২০০৪ –এর ২৬ ও ২৭ (১) ধারায় তাঁর বিরুদ্ধেরও একটি মামলা করা হয়।

বগুড়ায় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবুল কালাম আজাদ জানান, আবদুল মতিন সরকারের মামলাটির তদন্ত চলছে। দুদকের পক্ষ থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি আদালতের কাছে মতিনের সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ফ্রিজ করার আবেদন জানানো হয়। এই আবেদনের ফলে আদালত এই রায় দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল মতিন সরকার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন আদেশের খবর শুনেছি। আদালত থেকে নথি তোলার চেষ্টা করছি। যৌথ নামে জমি ও ব্যবসার কারণে হিসাবে একটু জটিলতা থাকতে পারে। তবে আমি পুরো সম্পদের হিসাব দুদকে জমা দিয়েছে। কোনো কিছু গোপন করিনি।’

প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই কলেজে ভর্তির কথা বলে এক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন তুফান। পরে তুফানের স্ত্রী ও তার বড় বোন নারী কাউন্সিলর এবং তুফানের লোকেরা ধর্ষণের শিকার ছাত্রী ও তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বাদী হয়ে ২৮ জুলাই রাতে মামলা করেন। এ মামলায় কারাগারে রয়েছেন তুফান সরকার। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত হত্যা, হত্যাচেষ্টা, মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের ছয়টি মামলার আসামিও তুফান সরকার।