সড়ক সংস্কারের দাবিতে যান বন্ধ রেখে মানববন্ধন

ঢাকা-গৌরীপুর-হোমনা সড়ক সংস্কারের দাবিতে দাউদকান্দির ভুলিরপাড়ে অটোরিকশার চালকেরা গতকাল মানববন্ধন করেন।  ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা-গৌরীপুর-হোমনা সড়ক সংস্কারের দাবিতে দাউদকান্দির ভুলিরপাড়ে অটোরিকশার চালকেরা গতকাল মানববন্ধন করেন। ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘদিন সংস্কার নেই ঢাকা-গৌরীপুর-হোমনা সড়কে। কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে সড়কের পিচঢালাই উঠে গেছে। খোয়া বের হয়ে অনেক স্থানে গর্ত হয়ে আছে। বৃষ্টি না হলেও সড়কের অনেক স্থানে আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা পানি টানা জমে থাকে। এসব স্থানে সড়কের গর্ত কাদা-পানিতে একাকার।
সড়কটির সংস্কারের দাবিতে গতকাল সোমবার সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা ১৫ মিনিট যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সড়কের ভুলিরপাড় এলাকায় মানববন্ধন করেছেন। এ সময় অনেক যাত্রীও গাড়ি থেকে নেমে পড়ে মানববন্ধনে অংশ নেন। সকাল ১০টা থেকে এ মানববন্ধন শুরু হয়। চলে সোয়া ১০টা পর্যন্ত। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী অটোরিকশাচালকেরা বলেন, এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠে আছে। তার ভেতরে রয়েছে ডুবো গর্ত। হঠাৎ এসব গর্তে পড়ে অটোরিকশা আটকে ও উল্টে যায়। ইঞ্জিনসহ যন্ত্রপাতি ভেঙে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। এক বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটি যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প সড়ক না থাকায় তাঁরা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এ সড়কে যানবাহন চালাচ্ছেন। এ সড়কে যানবাহন চালাতে গিয়ে শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন জানিয়ে তাঁরা বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সড়কটির সংস্কারকাজ শুরুর দাবি জানান।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-গৌরীপুর-হোমনা-বাঞ্ছারামপুর সড়কটি কুমিল্লা অংশে পড়েছে ১৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে দাউদকান্দি অংশে আছে দুই কিলোমিটার।
সড়কের গৌরীপুর বাজার ও ভুলিরপাড় এলাকায় পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। ফলে বৃষ্টি না হলেও আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পানিতে সড়কটি ডুবে থাকে। এতে সড়কটি ভেঙে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে ভরা সড়কে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচলের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কটি সর্বশেষ দেড় বছর আগে মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু পানি ওঠার কারণে মেরামতকাজ বেশি দিন টেকেনি। এক বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে।
এ সড়কে চলাচলকারী ঢাকা-হোমনা সুপার সার্ভিস বাসের চালক ওয়াছেক মিয়া বলেন, সারাক্ষণ আতঙ্ক নিয়ে এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। কারণ, সড়কের খাদে চাকা আটকা পড়ে যেকোনো সময় বাস উল্টে যাওয়ার ভয় থাকে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটি দাউদকান্দির পেন্নাই থেকে গৌরীপুর বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। ভুলিপাড় এলাকায় এমনভাবে পিচ ও খোয়া উঠে গেছে যে এখন বোঝারই উপায় নেই, সড়কটি এক সময় পাকা ছিল।

দাউদকান্দির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কলেজের শিক্ষক রকিব উদ্দিন বলেন, এ সড়কে নিয়মিত চলাচল করতে গিয়ে ঝাঁকুনিতে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আবার এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে অটোরিকশার ভাড়া ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা দিতে হচ্ছে। গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আমিন বলেন, বেহাল সড়কের কারণে ঐতিহ্যবাহী গৌরীপুর বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। আবার ভাঙা সড়ক দিয়ে প্রসূতিসহ অসুস্থ রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
জানতে চাইলে কুমিল্লা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার বলেন, এই সড়কের চেয়ে পাশের দোকানগুলো উঁচু স্থানে নির্মিত। ফলে এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পানি সহজেই সড়কে চলে আসছে। এ অবস্থায় সংস্কারকাজ করলেও সড়ক টেকসই হবে না। তা ছাড়া সড়কটি সংস্কারের ব্যাপারে এলাকাবাসীও সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।