উদীচী হত্যা মামলার বিচারকাজ ২০ বছরেও সম্পন্ন হয়নি

>* ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলা
* বোমার আঘাতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত, শত শত মানুষ আহত
* সব আসামিকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল
* এখন ওই আপিলের ওপর চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষা করা হচ্ছে।
* দীর্ঘদিনে বিচার না হওয়ায় নিহতদের স্বজনদের আক্ষেপ বাড়ছে
উদীচী হত্যা মামলা
উদীচী হত্যা মামলা

যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে দেশে প্রথম জঙ্গি হামলা হয়। কিন্তু ২০ বছরেও যশোরের উদীচী ট্র্যাজেডির সুষ্ঠু বিচার হয়নি। ২০১১ সাল থেকে মামলাটির বিচারকাজ থমকে রয়েছে।

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে শক্তিশালী এ বোমা হামলা চালানো হয়। বোমার আঘাতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত ও শত শত নিরীহ মানুষ আহত হন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় ও রামকৃষ্ণ।

দীর্ঘদিনেও বিচার না হওয়ায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। আহত হন ২৫০ জনের বেশি। হতাহতের পরিবারে দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে।

উদীচী ট্র্যাজেডিতে একটি পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পরবর্তী সময়ে সেই আওয়ামী লীগ আরও তিনবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু ২০ বছরেও হত্যাকাণ্ডে বিচার হলো না। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কথা বলি। সেই স্বাধীনতার পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকতেও যখন বিচার হয় না, তখন খুব কষ্ট লাগে। উদীচী ট্র্যাজেডির পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডের কিন্তু বিচার হয়েছে। আমি মনে করি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হবেই।’

উদীচী ট্র্যাজেডিতে দুই পা হারানো শিল্পী হরেন বাউল বলেন, ‘সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দুটি কৃত্রিম পায়ে ভর করে এখনো চলছি। এর মধ্যে দুই ছেলেকে হারিয়েছি। কৃত্রিম পায়ের অবস্থা ভালো না। জোড়াতালি দিয়ে চলতে হচ্ছে। মানবেতর জীবন যাপন করছি। এখন আর কেউ খোঁজ রাখে না। অনেক কষ্টে বেঁচে আছি। আট বছর আগে বড় ছেলে, দুই বছর হলো ছোট ছেলে মারা গেছে। পুত্রবধূ, পোতা ছেলে, স্ত্রীকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন চলছে। পা দুটি মেরামত করা দরকার। কিন্তু সেই টাকা নেই।’

উদীচী ট্র্যাজেডি মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে যশোর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলার সব আসামিকে বেকুসর খালাস দেওয়ার পর আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার ২০১১ সালে উচ্চ আদালতে আপিল আবেদন করে। ওই আপিলের ওপর চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষা করা হচ্ছে। সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করলে উচ্চ আদালত আপিল আবেদন গ্রহণ করে আসামিদের যশোরের নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। মামলার ২৩ আসামির মধ্যে ১৯ জন আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন। অপর চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই অবস্থায় মামলার বিচারিক কার্যক্রম থমকে আছে।

আজ বুধবার উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস। ‘যশোর হত্যাকাণ্ড দিবস’ শিরোনামে দিনটি পালন করছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যশোর জেলা সংসদ।

দিবসটি উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিকেল সাড়ে চারটায় যশোর টাউন হল মাঠের রওশন আলী মঞ্চে আলোচনা সভা,৫টা ৫০ মিনিটে উদীচী ট্র্যাজেডি স্তম্ভে ১০ শহীদের স্মরণে আলোক প্রজ্বালন ও পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং সন্ধ্যা ছয়টায় প্রতিবাদী গান ও কবিতা আবৃত্তি।