আরও সাহসী ভূমিকা চান পাঠক

পটুয়াখালীতে ‘পাঠকের মুখোমুখি প্রথম আলো’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অধ্যাপক শিরিন নাহার। গতকাল জেলার শিশু একাডেমী মিলনায়তনে।  প্রথম আলো।
পটুয়াখালীতে ‘পাঠকের মুখোমুখি প্রথম আলো’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অধ্যাপক শিরিন নাহার। গতকাল জেলার শিশু একাডেমী মিলনায়তনে। প্রথম আলো।

‘প্রথম আলো সমাজের নিপীড়িত মানুষের কথা বলে আসছে। প্রথম আলো একটি আন্দোলন, একটি দর্শন। রাষ্ট্র ও সমাজের নানা ধরনের অন্যায়, অসংগতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার থেকে সাহসী ভূমিকা পালনের প্রত্যাশা প্রথম আলোর কাছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধেও আমরা প্রথম আলোকে পাশে চাই।’

গতকাল মঙ্গলবার পটুয়াখালী শিশু একাডেমী মিলনায়তনে প্রথম আলো মুখোমুখি হয়েছিল পাঠকের। তাঁদের মুখেই উঠে আসে এসব প্রত্যাশার কথা।

‘পাঠকের মুখোমুখি প্রথম আলো’—এই প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রথম আলো উপকূলীয় এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের সমস্যা-সম্ভাবনার কথা শোনার উদ্যোগ নিয়েছে। বিকেল চারটায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এই মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত হন।

আধুনিক স্থাপত্যরীতির চমৎকার চারতলা ভবন পটুয়াখালী শিশু একাডেমী। নিচতলায় বিশাল মিলনায়তন। শিক্ষক–শিক্ষার্থী, কৃষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, গৃহিণী, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ আলোচনায় অংশ নেন। প্রথম আলোর পটুয়াখালী প্রতিনিধি শংকর দাস তাঁদের স্বাগত জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রথম আলোর ২০ বছরের পথচলার ওপর এবং প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালা বিদ্যালয় নিয়ে দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর স্থানীয় শিল্পীদের কণ্ঠে দেশের গান সবাইকে মুগ্ধ করে।

পাঠকের মুখোমুখি পর্বে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা দেশে গণতন্ত্র দেখতে চাই। অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে চাই। প্রগতিশীল চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, আমরা তা দেখতে চাই। সর্বোপরি আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এ দেশকে গড়ে তুলতে চাই।’ তিনি বলেন, প্রথম আলো পাঠককে তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে মানুষের পাশে থাকতে চায়।

উপস্থিত পাঠকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পটুয়াখালী জেলা শহরের শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের সমৃদ্ধকরণ, গলাচিপার পাতাবুনিয়া গ্রামে প্রথম আলো ছাত্রীনিবাস সংস্কারসহ এলাকার শিক্ষাবিস্তারে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন মতিউর রহমান।

পটুয়াখালীর বিশিষ্ট সংস্কৃতজন নির্মল কুমার দাসগুপ্ত প্রথম আলোর আরও উন্নতি, সমৃদ্ধি কামনা করে বক্তব্য দেন।

পটুয়াখালীর এ কে এম কলেজের সহকারী অধ্যাপক গৌতম চন্দ্র দাশ বলেন, গ্রামের প্রতিভার মূল্যায়ন করা হয় না। মফস্বলের লেখকদের লেখা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর জাতীয় পত্রিকাগুলো গুরুত্ব দিয়ে ছাপে না। ফলে গ্রামের মানুষের প্রতিভা থাকলেও তা বিকাশে তাঁরা সমান সুযোগ পান না।

সমাজকর্মী মাহফুজা ইসলাম শিক্ষাবঞ্চিত এলাকা লাউকাঠিতে অবহেলিত শিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না, তা ভেবে দেখার অনুরোধ জানান।

লতিফ মিউনিসিপ্যাল সেমিনারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিয়াউল আহসান বৃত্তিপ্রাপ্ত ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় প্রথম আলোর শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করার কথা বলেন। ব্যক্তিমানুষের সাফল্যের কাহিনি, কৃষি ও কৃষকের কথা বেশি করে তুলে ধরার পরামর্শ দেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা মানস কান্তি দত্ত বলেন, বরাবরের মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকুক দেশের সর্বাধিক প্রচারিত এই দৈনিক। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করতে প্রথম আলো হবে মূল সোপান।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন পটুয়াখালী জেলা গণফোরাম সভাপতি ও প্রবীণ আইনজীবী আবদুল আজিজ, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এম নুরুল ইসলাম, সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক পীযূষ কান্তি হরি, এ কে এম কলেজের সাবেক অধ্যাপক বেগম শিরিন নাহার প্রমুখ।