চাপের মুখে তদন্ত বন্ধ রাখার অভিযোগ

>

• ২০১৩ সালের ৬ মার্চ ত্বকীকে অপহরণ করা হয়
• দুই দিন পর শীতলক্ষ্যার শাখাখাল থেকে লাশ উদ্ধার
• টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করে
• ছয় বছরেও মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি
• ত্বকী হত্যা মামলার প্রধান আসামিও গ্রেপ্তার হননি

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় ছয় বছরেও অভিযোগপত্র দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব-১১। এ ঘটনায় ত্বকীর স্বজনসহ নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা অবিলম্বে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল ও আসামিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, সাগর-রুনি ও তনু হত্যার অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে না; কারণ, হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করা এখনো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। অথচ ত্বকীর ক্ষেত্রে তার উল্টোটা হয়েছে। ত্বকী হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনের কারণেই বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ঘাতকেরা সরকারের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে জড়িত, সে কারণে বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকার রাজনৈতিক প্রয়োজনে কোনো কোনো বিচার সম্পন্ন করে। আবার রাজনৈতিক প্রয়োজনে বিচার বন্ধ করে রাখে। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব-১১-এর তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসান সংবাদ সম্মেলনে জানান, ওসমান পরিবারের নেতৃত্বে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ, সময়সহ বিশদ বিবরণ তাঁরা তুলে ধরেন। এখন চাপের মুখে তদন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।

তদন্ত থেমে থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান প্রথম আলোকে বলেন, সব তদন্ত একই সময়ে শেষ করা যায় না। কোনো তদন্তে অনেক সময় লাগে। এ মামলাও সে ধরনের। তবে র‍্যাব আশা করে, খুব দ্রুত এ মামলার তদন্ত শেষ করা সম্ভব হবে।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, পরিবহন খাতে ওসমান পরিবারের চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করায় রফিউর রাব্বির ছেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। যে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তাঁরই টর্চার সেলে ত্বকীকে খুন করা হয়েছে বলে র‍্যাব উল্লেখ করে, সেই আজমেরী ওসমানকে এই ছয় বছরেও গ্রেপ্তার পর্যন্ত করা হয়নি।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘ছয় বছরেও ত্বকী হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেয়নি র‍্যাব। আমরা উদ্বিগ্ন, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ।’

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ঢাকা বিভাগীয় (দক্ষিণ) সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের কারণেই ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে না। আমরা চাই দ্রুত ত্বকী হত্যার বিচার শুরু করা হোক। খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ছয় বছরেও ত্বকী হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র না দেওয়া নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য দুঃখজনক। এটি ইনডেমনিটির মতো। আমার মনে হয়, এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ মহল থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার আমরাও চাই। সরকারের কাছে দাবি জানাব, এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।’

নারায়ণগঞ্জ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় যতগুলো চাঞ্চল্যকর মামলা রয়েছে, তার মধ্যে ত্বকী হত্যা মামলাও অন্তর্ভুক্ত। চাঞ্চল্যকর মামলা মনিটরিং করার জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি থেকে বারবার তদন্তের জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে এবং জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে এটা মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন কবে আদালতে জমা দেওয়া হবে, তা তিনি জানেন না বলে জানান।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নগরের শায়েস্তা খান রোডের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর ত্বকীকে অপহরণ করা হয়। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখাখাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।