পুলিশ-পরিবহন মালিক পরস্পর দোষারোপ

নিয়ম না মেনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। গত সোমবার বিকেল পাঁচটায় পশ্চিম পটিয়া এলাকায়।  ছবি: জুয়েল শীল
নিয়ম না মেনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। গত সোমবার বিকেল পাঁচটায় পশ্চিম পটিয়া এলাকায়। ছবি: জুয়েল শীল

সাড়ে তিন বছর আগেই ঢাকা–চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম–কক্সবাজারসহ দেশের ২২টি মহাসড়কে সিএনজিচালিত তিন চাকার যানবাহন, অটোরিকশা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু মহাসড়কে অটোরিকশাসহ নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল করছে। এতে কখনো কখনো মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনা এড়ানো এবং বড় গাড়ির চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে দেশের ২২ মহাসড়কে অটোরিকশাসহ ধীরগতির গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।
পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, মহাসড়কে অটোরিকশাসহ ধীরগতির গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু পরিবহন সংগঠন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। তাঁদের কারণেই শক্ত অবস্থানে যেতে পারছে না হাইওয়ে পুলিশ। তবে পরিবহন মালিক সংগঠন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের অভিযোগ, পুলিশ ‘টোকেন–বাণিজ্য’ করতে ছোট গাড়ি চালাচ্ছে।

সরেজমিন চিত্র
গত শনিবার চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার কেরানীহাট থেকে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক পর্যন্ত শত শত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রায় প্রতিটি বাজারে যাত্রী ওঠানামা করছিল অটোরিকশাগুলো। কেরানীহাট থেকে মইজ্জারটেক পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৪৪ কিলোমিটার। এই পথে অন্তত ডজনখানেক হাটবাজার রয়েছে। এই হাট থেকে ওই হাটে যেতে স্থানীয় লোকজন অটোরিকশায় ভ্রমণ করছিলেন। কিন্তু হাইওয়ে কিংবা জেলা ট্রাফিক পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

স্থানীয় চালক ও যাত্রীরা জানায়, সাপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলোতে মহাসড়কে নিষিদ্ধ অটোরিকশা চলাচল বেড়ে যায়। কারণ, তখন কর্মজীবী লোকজন গ্রামমুখী হন।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কে গাড়ি চালানোর কারণ জানতে চাইলে গত সোমবার দুপুরে পটিয়া থানার মোড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক নুরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে চালানোর জন্য গাড়িটি কেনা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এতে হাজার হাজার চালকের মতো তিনিও সমস্যায় পড়েন।
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, গ্রামের সড়কগুলোতে শত শত অটোরিকশা চলছে। কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় তাঁরা মহাসড়কে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। নইলে প্রতিযোগিতার বাজারে মালিকের দৈনিক জমাও তাঁরা দিতে পারবেন না।
একই দিন চন্দনাইশে কথা হয় অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ বোরহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে কম দূরত্বের গন্তব্যে যাত্রীরা বাস পায় না। এ জন্য তারা অটোরিকশা বেছে নেয়। মহাসড়কে অটোরিকশা চালালে যাত্রী পাওয়া যায়।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিএনজি থ্রি হুইলার মালিক পরিষদের সভাপতি মহিউদ্দিন বলেন, গ্রামের রাস্তায় অটোরিকশা চালিয়ে সন্তোষজনক আয় সম্ভব নয় বলে অনেকে মহাসড়কে চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এ জন্য কেউ কেউ পুলিশের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছেন। নইলে শত শত গাড়ি মহাসড়কে চলবে কেন?
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এই মহাসড়কটি চার লেনের হওয়ায় উল্টো পথে অটোরিকশা বেশি চলাচল করে।

হাইওয়ে পুলিশের বক্তব্য মানতে চায় না পরিবহন মালিক সমিতি
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছোট গাড়ি চলাচলের কারণ জানতে চাইলে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে বড় গাড়ির অভাবে স্থানীয় যাত্রীরা ছোট গাড়ি বেছে নিয়েছে। তবে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়েছে। যদিও দু–চারটি চুরি করে উল্টো পথে চলছে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে ছোট গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করতে পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে।
মহাসড়কে বড় গাড়ি তথা বাসের স্বল্পতার কারণ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, কিছু পরিবহন সমিতি এবং স্থানীয় প্রতিনিধি রাস্তায় বড় গাড়ি নামাতে বাধা দেন। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নজরে আনা হয়েছে। মহাসড়কে বাসের কোনো বিকল্প নেই।

হাইওয়ে পুলিশ সুপারের বক্তব্য মানতে রাজি নন চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জুরুল আলম।। তিনি বলেন, অবৈধ গাড়ির টোকেন–বাণিজ্য বন্ধ হলে পুলিশের আয় কমে যাবে। এ জন্য মহাসড়কে ছোট গাড়ি চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না।

মঞ্জুরুল আলম আরও বলেন, কোন মহাসড়কে যাত্রীর সংখ্যা কত তা জরিপ করে বড় গাড়ি নামানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পুলিশের টোকেন–বাণিজ্য বন্ধ না হলে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না।