বিদ্যুৎখুঁটিতে ঢাকা পড়ল 'অনন্ত'

বিদ্যুতের খুঁটিতে ঢাকা পড়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার ঘটনাস্থলে প্রতিবাদী দেয়ালচিত্র। বুধবার বিকেলে সিলেট নগরের সুবিদবাজারের চৌরাস্তা এলাকায়।
বিদ্যুতের খুঁটিতে ঢাকা পড়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার ঘটনাস্থলে প্রতিবাদী দেয়ালচিত্র। বুধবার বিকেলে সিলেট নগরের সুবিদবাজারের চৌরাস্তা এলাকায়।

কালো আর ছোপ ছোপ রক্তের দেয়ালচিত্র। সেখানে মুষ্টিবদ্ধ হাত আর কলম এঁকে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অনন্ত, অনন্তকাল’। সিলেটে ২০১৫ সালের ১২ মে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যার ঘটনাস্থল সিলেট নগরের সুবিদবাজারের চৌরাস্তায় প্রতিবাদী সেই দেয়ালচিত্রের স্মৃতিস্তম্ভ আড়াল করে স্থাপন করা হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। এতে সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অনন্ত হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক সপ্তাহ পর ১৮ মে এলাকাবাসীর সহায়তায় অকালপ্রয়াত যুব সংগঠক মইনুদ্দিন আহমদ ‘অনন্ত বিজয় দাশ স্মৃতি রক্ষা পরিষদ’ গঠন করে দেয়ালচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। দেয়াল উন্মোচন করে ওই দিনই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরের বছর দেয়ালচিত্রে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার দিনটি পালন এখান থেকেই শুরু হয়।

দেয়ালচিত্রের অঙ্কনশিল্পী ছিলেন অনন্ত বিজয় দাশের বন্ধু অরূপ বাউল। স্মৃতিস্তম্ভের নকশাও তিনি করেছেন। গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, স্মৃতিস্তম্ভের ঠিক সামনে এবং গা ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। এ কারণে সড়ক থেকে আর স্মৃতিস্তম্ভটি দেখা যাচ্ছে না।

স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সিলেটের নাগরিক সংগঠন ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’ সংগঠক আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘২০১৩ সালে সারা দেশে বেশ কয়েকজন লেখক-প্রকাশক খুন হলেও তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সিলেটে অনন্ত বিজয় খুন হওয়ার পর তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে আমরা অস্থায়ীভাবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করি। আগামী প্রজন্ম যাতে বিজ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রেরণা পায়, তাই এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই স্তম্ভের সামনেই বিদ্যুৎ বিভাগের খুঁটি স্থাপন কেবল অবিবেচনামূলকই নয়, এটি একটি অসভ্য কাজ হয়েছে। আমরা চাইব বিদ্যুৎ বিভাগ অচিরেই এটি সরিয়ে নিয়ে পাশেই যে খালি জায়গা আছে, তার কোনো এক জায়গায় স্থাপন করবে।’

২০১৫ সালের ১২ মে সকালে কর্মস্থলে যেতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন অনন্ত। নগরের সুবিদবাজারের নূরানী আবাসিক এলাকার চৌরাস্তার মোড়ে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বস্তুবাদ ও যুক্তিবাদ নিয়ে ব্লগে লিখতেন। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত বিজ্ঞানবিষয়ক বই রয়েছে। বিজ্ঞানবিষয়ক ছোট কাগজ যুক্তি নামে একটি পত্রিকা নিয়মিত সম্পাদনা করতেন তিনি। সিলেটে পরিচালিত বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অনন্ত।

স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ। তিনি বলেন, এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। দ্রুত এটি অপসারণ করা উচিত। সুবিদবাজার সিটি করপোরেশনের ৭ ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকা। বৈদ্যুতিক খুঁটিটি অপসারণে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফতাব আহমদ।

যোগাযোগ করলে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী সরদার আজম মোহাম্মদ বলেন, ‘সিলেটে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। কোনো প্রকল্পের অধীনে এই খুঁটি স্থাপন করা হতে পারে। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’