নিয়ম ভেঙে বঙ্গবন্ধু চেয়ারে উপাচার্য

ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী
ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ (গবেষণাকেন্দ্র) পদে গবেষক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি। তবে ‘নিয়ম অনুযায়ী’ ওই পদের নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন না সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।

সিন্ডিকেট সভা ও একাডেমিক কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন না নেওয়ায় উপাচার্যের এই পদে বসা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক এটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

অবশ্য বিতর্কের বিষয়ে উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এ পদে কোনো ধরনের বেতন–ভাতা নেব না। যেহেতু কোনো বেতন-ভাতা নিচ্ছি না, সেহেতু সিন্ডিকেটের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। উপাচার্যের ক্ষমতাবলে এটি বাস্তবায়িত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে না, তারাই বিতর্ক সৃষ্টি করছে। জামায়াত-শিবিরের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এরা বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হয়ে গিয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু চেয়ার নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ওই পদের জন্য তৈরি নীতিমালার অনুমোদন করা হয়। একই দিন উপাচার্যকে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে। ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ নির্বাহী কমিটির সভাপতি উপাচার্য নিজেই। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহ-উপাচার্য, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও রেজিস্ট্রার। তবে নির্বাহী কমিটির সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন না সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।

কমিটির তৈরি নীতিমালার ৪–এর খ–তে বলা হয়েছে, ‘নিয়োগ দেওয়ার জন্য কমিটির সুপারিশ সিন্ডিকেটে পেশ করা হবে এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে চুক্তি ভিত্তিতে উক্ত পদে নিয়োগ প্রদান করা হবে।’ সেই নীতিমালা ভঙ্গ করে উপাচার্য এ পদে দায়িত্ব নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২০তম সিন্ডিকেট সভায় ওই পদে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সে বিষয়টি সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচি আকারে তোলা হয়নি। তবে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের জন্য তৈরি নীতিমালা প্রতিবেদন আকারে সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল। ওই সভায় বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান সহ-উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিনেট সদস্য কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ও ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদের নীতিমালা অনুযায়ী এ নিয়োগের জন্য অবশ্যই সিন্ডিকেটের অনুমোদন লাগবে। সুতরাং ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে নিয়োগ ও যোগদান কোনোভাবেই আইনসম্মত বলা যায় না।

২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৫১০তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কীর্তি নিয়ে গবেষণা ও তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়। এরপর উপাচার্য ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ তৈরি করতে একটি কমিটি গঠন করে দেন। কমিটি প্রথমবারের মতো সৃষ্টি হওয়া ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর নাম সুপারিশ করে।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মকানুন ভঙ্গ করে উপাচার্য ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে আসীন হয়েছেন। নীতিমালা অনুযায়ী, ওই পদে যিনি বসবেন, তাঁর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২০ বছরের গবেষণা থাকতে হবে। পাশাপাশি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অন্তত ১০টি নিবন্ধ কিংবা প্রবন্ধ থাকতে হবে। কিন্তু উপাচার্যের এ বিষয়ে কোনো গবেষণা প্রবন্ধ নেই। তাই নিয়ম অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া শেষ করে যোগ্য কাউকে নিয়োগ দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য শিরীণ আখতার গতকাল তাঁর কার্যালয়ে সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলাম না। কারণ, বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের প্রক্রিয়াটি নিয়ম অনুযায়ী হয়নি। আমি চাই এই প্রক্রিয়াটি নিয়মমাফিক হোক। সিন্ডিকেট সভায় কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সে বিষয়েও আলোচনা হয়নি। একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমেও প্রক্রিয়াটি আসেনি।’