বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে দুটিতে আ.লীগের হার

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী এবং দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মিলে ভোট পেয়েছেন ৬৪ হাজার ২১৩। তাঁদের সম্মিলিত ভোটের চেয়ে ৮৩১ ভোট কম পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, দলের সমর্থিত প্রার্থী হেরেছেন অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে। বাঘারপাড়া উপজেলাতেও দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন একই কারণে।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এ দুটিতে হারলেও জেলার চৌগাছা ও শার্শায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। অবশ্য বিএনপির অভিযোগ, চৌগাছা ও শার্শায় স্থূল কারচুপি ও কেন্দ্র দখল করে তাদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঝিকরগাছায় ভোট পড়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৯৭৯টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ৩৯ হাজার ২১৮ ভোট ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মুছা মাহমুদ পেয়েছেন ২৪ হাজার ৯৯৫ ভোট। আর বিজয়ী প্রার্থী বিএনপি-সমর্থিত সাবিরা সুলতানা পেয়েছেন ৬৩ হাজার ৩৮২ ভোট।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি তো পরিষ্কার যে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে আমরা ১৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হতাম। বিদ্রোহী প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে আমরা অনেকবার বলেছি। ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারাও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁকে বসাতে পারেননি। তাই নির্বাচনে আমাদের হারতে হয়েছে। আমরা মুছা মাহমদুকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’
অবশ্য স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, কেবল আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণেই নয়, মানুষের সহানুভূতির কারণে বিশেষ করে নারী ভোটারদের ভোট পেয়েছেন আগে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকা সাবিরা সুলতানা। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজমুল ইসলামের স্ত্রী। বছর দুয়েক আগে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে অজ্ঞাতনামা লোকজন নাজমুলকে অপহরণের পরদিন গাজীপুরের শালবাগান থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। বিএনপির নেতারা বলছেন, ঝিকরগাছার ৯৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টিতেই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়নি। হলে তিনি আরও বিপুল ভোটে জয়ী হতেন।
বাঘারপাড়ায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মসিয়ুর রহমান ১১ হাজার ৭১৬ ভোটে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আবদুর রউফকে পরাজিত করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মনজুর রশিদ কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ব্যালট পেপারে তাঁর প্রতীক ছিল। আর শুরু থেকে দলের দুজন প্রার্থী থাকায় কোন্দল ছিল। এসব কারণে আওয়ামী লীগের পরাজয়।
বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলীও বিষয়টি স্বীকার করেন। গতকাল শুক্রবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় কোন্দল ও ভুল প্রার্থী বাছাইয়ের কারণে এখানে আমরা হেরেছি। বিদ্রোহী প্রার্থী মনজুরকে দল সমর্থন দিলে আমরাই জয়ী হতাম।’
চৌগাছায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী এস এম হাবুিবর রহমান ২২ হাজার ভোটে হারিয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী জহরুল ইসলামকে। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, নির্বাচনের দিন জহরুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগের ক্যাডারার। তারা এই উপজেলার ৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৪টি দখল করে নেয়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপিই জিততো।
কেন্দ্রওয়ারি ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৭টিতেই জয়ী হয়েছেন জহরুল। ১৫ থেকে ২০টি কেন্দ্রে একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন হাবিবুর। এর মধ্যে চাঁদপুর কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৭ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এখানে তিন হাজার ৬০ ভোটের মধ্যে হাবিবুর পেয়েছেন দুই হাজার ৯৪৪ ভোট আর জহরুল পেয়েছেন ১৩ ভোট। ১, ৫, ১৭, ২৪, ২৭, ৩৪, ৬০ ও ৭৬ নম্বর কেন্দ্রেও হাবিবুর যেখানে ১৫ হাজার ১২৩ ভোট পেয়েছেন, সেখানে জহরুল পেয়েছেন ২৯৩ ভোট।
শার্শায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থী থাকলেও বুধবার রাতে আবদুল মান্নানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এখানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ৫১ হাজার ২৫২ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি-সমর্থিত খায়রুজ্জামানকে পরাজিত করেছেন। বিএনপি অভিযোগ করেছে, শার্শার ৯৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭২টিই দখল করে নিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল।