ডাকসুর পুনঃ তফসিলের দাবিতে আমরণ অনশন

অনিয়মের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের জন্য পুনঃ তফসিলের দাবিতে অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী। তাঁদের চারজন বিভিন্ন হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শিক্ষার্থীরা অনশন শুরু করেন। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের পুনঃ তফসিল ঘোষণার আগে ১১ মার্চের নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের (উপাচার্য ও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অন্য পাঁচ রিটার্নিং কর্মকর্তা) পদত্যাগের দাবিও জানাচ্ছেন তাঁরা৷ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা অনশনে ছিলেন৷

অনশনে বসা ছয় শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদ তানজিম, দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য মণ্ডল, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাঈন উদ্দিন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রনি হোসেন এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফিয়া তামান্না।

তাঁদের মধ্যে তাওহীদ তানজিম ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থী ছিলেন, অনিন্দ্য মণ্ডল জগন্নাথ হল সংসদে সদস্য পদে প্রগতিশীল ছাত্রঐক্যের প্রার্থী ছিলেন, মাঈন উদ্দিন ছিলেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল সংসদের প্রগতিশীল ছাত্রঐক্যের সংস্কৃতি সম্পাদক পদের প্রার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হল সংসদে সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রগতিশীল ছাত্রঐক্যের প্রার্থী ছিলেন।

অনশনের সময় তাঁদের পাশে রাখা তিনটি প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘একটা ফেয়ার ইলেকশনের জন্য...’ ‘আমরণ অনশন...’ ও ‘শিক্ষকদের ভোট ডাকাতি এই লজ্জা কোথায় রাখি?’

অনশনে বসা শিক্ষার্থী অনিন্দ্য মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘১১ মার্চ একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে থাকা শিক্ষকেরা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের পক্ষে নির্লজ্জভাবে কাজ করেছেন। আমরা পুনরায় নির্বাচন যেমন চাই, সেই নির্বাচনের তফসিলের আগে সেসব শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি চাই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনঃ তফসিলের দাবিতে অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১২ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনঃ তফসিলের দাবিতে অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১২ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো

অনশনকারীদের পক্ষে তাওহীদ তানজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু ভোটের লাইনে ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি প্রভাবশালীদের। যত উপায়ে সম্ভব, ঠিক সেভাবেই নির্বাচনকে অরাজক করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলো সহ্য করার মতো নয়। সে পরিপ্রেক্ষিত থেকে অনশনে বসা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) পদে নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান এ ফল ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ ফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফল অনুসারে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়ী হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। ডাকসুর ২৫ পদের মধ্যে ২৩টিতেই ছাত্রলীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী আখতার হোসেন।

ভিপি পদে বিজয়ী নুরুল হক কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে নির্বাচন করেন। অন্যদিকে জিএস পদে নির্বাচিত গোলাম রাব্বানী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।

ঘোষিত ফল অনুসারে ২৫ হাজারের কিছু বেশি ভোট প্রয়োগ হয়েছে, যা মোট ভোটের ৫৯ শতাংশ। ভিপি পদে নুরুল হক পান ১১ হাজার ৬২ ভোট। এ নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ২৫৫ জন। এদিকে এ ফল ঘোষণার পরপরই সেখানে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ভিপি পদে জয়ী নুরুল হকের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। তাঁকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন।