সহকর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদ: পুলিশের লাঠিপেটায় আহত ১০ শ্রমিক হাসপাতালে

সহকর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানার ১০ শ্রমিক। বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নগরের বালুছড়া এলাকায় ফোর এইচ অ্যাপারেলসের সামনে তাঁরা লাঠিপেটায় আহত হন।

পুলিশের লাঠিপেটার ছবি তোলার সময় প্রথম আলোর আলোকচিত্রী জুয়েল শীলের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে তাঁকে হেনস্তা করা হয়েছে। জোর করে তাঁর ক্যামেরার ছবি মুছে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের সহকারী পরিদর্শক শরীফুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের লাঠিপেটা ও সাংবাদিক হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে।

লাঠিপেটায় গুরুতর আহত অবস্থায় পাখি আকতার (১৮) নামের একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন। আরও ৯ শ্রমিককে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক সমীর কান্তি দাশ জানান। তিনি বলেন, অবরোধ করার সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে তাঁরা আহত হয়েছেন।

পোশাকশ্রমিক ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফোর এইচ অ্যাপারেলসের হাজেরা খাতুন নামের এক শ্রমিক গত শনিবার নিজের বাসায় আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিকেরা বলেন, চুরির অভিযোগে শনিবার রাতে এই নারী সহকর্মীকে কারখানার কর্মকর্তারা নির্যাতন করেন। এরপর বাসায় গিয়ে অপমানে ওই নারী আত্মহত্যা করেন। এর প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে শত শত শ্রমিক বিক্ষোভে নামেন। প্রথমে কারখানা প্রাঙ্গণে তাঁরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা হাটহাজারী-চট্টগ্রাম সড়কে নেমে আসেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা হাজেরার আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামী জোন) সোহেল রানা বলেন, গত শনিবার চুরির অভিযোগে হাজেরা খাতুনকে আটক করেন কারখানার নিরাপত্তাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে রোববার বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু ওই দিনই বাসায় ফিরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আসলে কী ঘটনা ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আলোকচিত্রী জুয়েল শীলের হেনস্তার প্রতিবাদ জানিয়ে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা দোষী পুলিশের শাস্তির দাবি করেন। এ ছাড়া বিএফইউজের সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী আব্বাস ও চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিদারুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এ ঘটনায় রাতে উত্তর জোনের উপকমিশনার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে। এদিকে সাংবাদিক হেনস্তার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শরীফুল ইসলাম।