চারটিতে আ.লীগের প্রার্থী একক, দুটিতে 'বিদ্রোহী'

সেনবাগে এস এম জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর আ. লীগের প্রার্থী জাফর আহম্মদ চৌধুরীকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন। গতকাল দুপুরে।  প্রথম আলো
সেনবাগে এস এম জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর আ. লীগের প্রার্থী জাফর আহম্মদ চৌধুরীকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন। গতকাল দুপুরে। প্রথম আলো

চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নোয়াখালীর সাতটি উপজেলার মধ্যে চারটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। উপজেলাগুলো হলো সোনাইমুড়ী, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ ও সুবর্ণচর। ওই সব উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা গতকাল বুধবার তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।

নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা হলেন সেনবাগে জাফর আহম্মদ চৌধুরী, সোনাইমুড়ীতে খন্দকার রুহুল আমিন, সুবর্ণচরে এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী ও কোম্পানীগঞ্জে মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন। এর মধ্যে খায়রুল আনম এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন।

এ ছাড়া একই কারণে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যানের দুটি পদে এবং সুবর্ণচর উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হওয়ায় তাঁদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ৩১ মার্চ জেলার পাঁচটি উপজেলায় কেবল ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং তিনটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের তিনটি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর সাতটি উপজেলার মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী রয়েছেন। এ দুটি উপজেলার একটি হলো কবিরহাট। এটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকা। আর অপর উপজেলা হলো বেগমগঞ্জ। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্যাহ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা।

নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে গতকাল সেনবাগ উপজেলায় দুই প্রার্থীর মধ্যে লায়ন এস এম জাহাঙ্গীর আলম মানিক প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আহম্মদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এ উপজেলায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে গতকাল প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন শওকত হোসেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তিনজন। মোহাম্মদ গোলাম কবির, নুরজ্জামান চৌধুরী ও আবদুর রব। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তাঁরা হলেন হাফিজা বেগম, ফেরদৌস আরা, মরিয়াম সুলতানা, সাজেদা আক্তার, নাজমুন নাহার ও দিলরুবা আক্তার।

সোনাইমুড়ীতে তিন প্রার্থীর মধ্যে আ ফ ম বাবুল ও মো. মমিনুল ইসলাম প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী খন্দকার রুহুল আমিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন মো. আসাদুজ্জামান, মো. নিজাম উদ্দিন ও মো. আবদুল আউয়াল। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন তিনজন—লুবনা আক্তার, আয়েশা আক্তার ও পারভীন আক্তার।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের চারজন প্রার্থীর মধ্যে মিজানুর রহমান বাদল, মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, মো. আবদুল লতিফ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। একইভাবে এ উপজেলায় একক প্রার্থী হওয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে আ জ ম পাশা চৌধুরী ও আরজুমান পারভীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।

সুবর্ণচর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মুন্নী আহমেদ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় সালমা সুলতানা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। এ উপজেলায় কেবল পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ পদের তিন প্রার্থী হলেন মো. ফরহাদ হোসেন চৌধুরী, তাজ উদ্দিন ও আবদুর রশিদ।

কবিরহাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থীর কেউই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের কামরুন নাহার, ‘বিদ্রোহী’ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আলা বক্স ও স্বতন্ত্র খাদেমা আক্তার। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যানের পদে তিনজন—মো. মানজুর হোসেন, মো. নুরুল আলম ভূঁইয়া ও মো. নজরুল ইসলাম এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন তিনজন—শাহানা আক্তার, বিবি জয়নব ও ফরিদা ইয়াসমিন।

চাটখিল উপজেলা চেয়ারম্যান পদের ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে চারজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির ও স্বতন্ত্র ফজলুল করিম। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী থাকায় এইচ এম আলী তাহের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন তিনজন—শামীমা আক্তার, পান্না আক্তার ও রোজিনা আক্তার।

বেগমগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে আবদুর রব প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বর্তমানে দুজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক ও ‘বিদ্রোহী’ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোহাম্মদ উল্যাহ।

এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন পাঁচজন— আবু বকর ছিদ্দিক, এম এ মন্নান রানা, মো. নুর হোসেন মাসুদ, মো. মেজবাহ উদ্দিন ও মো. মাহবুবুর রহমান। অন্যদিকে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন চারজন— আবিদা সুলতানা, চঞ্চলা রানী দেবী, মাহমুদা বেগম ও সাজেদা আক্তার।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, যেসব উপজেলায় একটি পদের বিপরীতে একক প্রার্থী রয়েছেন তাঁদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আজ প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।