স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কটির সংস্কার

স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। গতকাল সাতক্ষীরার মাছখোলা ক্লাব মোড়ে। প্রথম আলো
স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। গতকাল সাতক্ষীরার মাছখোলা ক্লাব মোড়ে। প্রথম আলো

দেড় যুগ ধরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাছখোলা ক্লাব মোড় থেকে মাছখোলা বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হয়নি। অবশেষে স্বেচ্ছাশ্রমে গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় স্থানীয় প্রত্যাশা ক্লাবের সভাপতি আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ক্লাবের ১০১ জন সদস্যের স্বেচ্ছাশ্রমে ইট, খোয়া ও বালু দিয়ে এ সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।

মাছখোলা গ্রামের আমিনুর রশিদ জানান, মাছখোলা সড়কটি সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত। এ সড়ক ২০০০ সালে বন্যার পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যায়। তারপর আর সংস্কার হয়নি। এখন প্রতি বর্ষা মৌসুমে সড়কটি ডুবে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

সড়কটি কেন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন, এমন প্রশ্নে ক্লাবের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন বলেন, রাস্তাটি অনেক দিন ধরে অবহেলিত। ২০০০ সালের বন্যার পর রাস্তাটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গোয়ালপোতা, মাছখোলা, পারমাছখোলা, মেঠোপাড়া, গোবিন্দপুর, দামারপোতা, বাগডাঙ্গা, বড়দল, জিয়ালা, কামারডাঙ্গা, হরিণখোলা, সাল্লেসহ ৩৫-৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাছখোলা ক্লাব মোড় থেকে বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক বেহাল। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ক্লাব সদস্যরা নিজেদের উদ্যোগে ও অর্থায়নে গতকাল সকাল থেকে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন। মাছখোলা এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রাস্তার যে অবস্থা, তাতে রিকশা ও ভ্যানে যাতায়াত করা যায় না। তাঁদের অনেক কষ্ট হয় রাস্তা খারাপের জন্য। একই এলাকার শামিম হোসেন বলেন, ভোটের সময় কত প্রার্থী এসে রাস্তা সংস্কারের ওয়াদা করেন, কিন্তু পরে রাস্তা সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না।

মাছখোলা গ্রামের আমিরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক এ রাস্তা দিয়ে সাতক্ষীরা শহরে যাতায়াত করে। রাস্তাটি খারাপ থাকায় শহর থেকে কোনো ভ্যান ও ইজিবাইক এই এলাকায় আসতে চায় না। দুই কিলোমিটার রাস্তা অনেক সময় ২০০ টাকা ভাড়া দিতে চাইলেও যেতে যায় না। এমনকি এলাকার কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছিল।

ক্লাবের সদস্য আলম, জামাল উদ্দিন, ওসমান গনি, আবদুল হাকিম, রবিউল ইসলাম, খোকনসহ আরও অনেকেই জানান, দীর্ঘ দেড় যুগ পার হলেও রাস্তাটি সংস্কারের কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই তাঁরা সদস্যরা মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে এ রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন।

ব্রহ্মরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, সড়কটির সত্যিই নাজুক। তিনি এলজিইডিসহ কয়েকটি বিভাগে সড়কটি সংস্কার করার জন্য আবেদন করেছেন। শুনেছেন, কাজটি এলজিইডি দ্রুত শুরু করবে।

সাতক্ষীরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুণ্ডু জানান, তিনি কিছুদিন হলো এখানে যোগদান করেছেন। এসেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রায় দুই কিলোমিটার এ কাজের জন্য স্থানীয় সাংসদের মাধ্যমে চেষ্টা করে এক কোটি টাকার অনুমোদন করিয়েছেন। তবে টেন্ডার প্রক্রিয়া, সামনে বর্ষা মৌসুম সব মিলিয়ে জুন মাসের আগে সড়কের কাজ শুরু করা যাবে না।