বাঘাইছড়িতে জিততে মরিয়া দুই আঞ্চলিক দল

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও জেএসএস-এমএন লারমা পক্ষ জিততে মরিয়া। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ধরে রাখতে চায় জেএসএস। অপরদিকে পদটি পুনরুদ্ধারের জন্য আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মাঠে আছে জেএসএস-এমএন লারমা পক্ষ। বিবদমান দুই দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন ও নির্বাচনে কারচুপির পরিকল্পনার অভিযোগ এনেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী দেয়নি। এতে ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি হচ্ছে আঞ্চলিক দল জেএসএস ও জেএসএস-এমএন লারমা পক্ষ। উপজেলায় দুই আঞ্চলিক দলের মধ্যে অধিকাংশ এলাকায় জেএসএসের আধিপত্য রয়েছে। বর্তমানে ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সঙ্গে জেএসএসের সখ্য তৈরি হওয়ায় উপজেলার অধিকাংশ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জনসংহতি এমএন লারমা পক্ষের প্রভাবাধীন এলাকা কম হলেও আওয়ামী লীগকে সঙ্গে পাওয়ায় শক্তি বেড়েছে দলটিরও। ইতিমধ্যে উপজেলা সদরসহ বাঙালি এলাকায় এমএন লারমার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে বিএনপি এখনো কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারও উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেএসএস ও এমএন লারমার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও গতবারের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা দোয়াত–কলম প্রতীক নিয়ে লড়বেন। আর জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও ২০০৮ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়বেন। এ ছাড়া নারী ভাইস চেয়ারম্যান দুজন ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এখানে ভোটার সংখ্যা ৬৬ হাজার ৮২২ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩৮টি।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
জেএসএস নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগকে নিয়ে জেএসএস-এমএন লারমা পক্ষ নির্বাচনের কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ১২ মার্চ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা।
এমএন লারমার নেতারা অভিযোগ করেছেন, জেএসএসের অস্ত্রধারীদের হুমকির মুখে প্রচারণায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলা সদর ও কয়েকটি এলাকা ছাড়া কোথাও প্রচারণা চালাতে পারছে না জেএসএস-এমএন লারমার কর্মী-সমর্থকেরা। এমএন লারমার প্রার্থীকেও প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) বাঘাইছড়ি শাখার সহসাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থী বা ব্যক্তিকে হুমকি দেওয়া হয়নি। অস্ত্রের মহড়া দেওয়া ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর প্রশ্নই আসে না। জনগণ জেএসএসের পক্ষে রয়েছে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট হলে আমাদের প্রার্থী জয়ী হবে।’
জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা বলেন, ‘আমরা গোপন সূত্রে জানতে পারছি, আওয়ামী লীগ ও এমএন লারমা মিলে ভোটকেন্দ্র দখল করার পরিকল্পনা করছে। এই পরিকল্পনা প্রতিহত করব আমরা।’

জেএসএস-এমএন লারমার কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী সুদর্শন চাকমা বলেন, ‘জেএসএসের সশস্ত্র মহড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাঁদের মহড়ার কারণে সাধারণ ভোটাররা ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছেন। ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হব। প্রতিপক্ষের বাধা ও হুমকির কারণে প্রচারণা করা যাচ্ছে না।’

সংঘাতের আতঙ্কে ভোটাররা
মারিশ্যা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মুন্সি মিয়া বলেন, ‘আমরা শঙ্কায় আছি। নিজেদের ভোট সুষ্ঠুভাবে দিতে পারব কি না, এ নিয়ে চিন্তায় আছি। আমরা চাই যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়। দুই পক্ষের অস্ত্রধারী থাকায় সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কে রয়েছেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভোটার প্রথম আলোকে বলেন, জেএসএস ও এমএন লারমা উভয় পক্ষেই অস্ত্রধারী ব্যক্তি রয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে তারা বিভিন্ন স্থানে মহড়া দিচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। ভয়ে কেউ কিছু বলছে না। যেকোনো মুহূর্তে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। সন্ধ্যার আগে সবাই ঘরে ঢুকে পড়ছে। স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাদিম সারওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যা প্রয়োজন তা করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মারিশ্যা জোনের জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য বিজিবি কঠোর অবস্থানে আছে। দিন-রাত টহল দিচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা।