'একন আমারে পঙ্গু হয়্যা চলতে হবি'

হাসপাতালে সাইফুল ইসলাম।  প্রথম আলো
হাসপাতালে সাইফুল ইসলাম। প্রথম আলো

‘রামদা দিয়া কোপ মারি আমার বাঁ হাত দেহ থ্যাকি কাটি দিছে। ওই হাতটা একন কবরে! তাও ওয়ারে সাধ মিটেনি। দেহের বাকিটা লিয়া ৯ দিন ধরি হাসপাতালে আছি। একন ওরা আমার বুনকে খুন করার হুমকি দিছে। ওয়ারে পুলিশ একনো ধরেনি। ওরা বুক ফুলাই ঘুরি বেড়াচ্ছে।’ গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বিছানায় বসে কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের লালপুর উপজেলার ঈশ্বরপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৪৫)। স্থানীয় দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে গেলে একটি পক্ষ কোপ দিয়ে সাইফুলের বাঁ হাতটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ঘটনাটি ঘটে ৬ মার্চ বিকেলে।

সাইফুল জানান, তিনি একজন দিনমজুর। ঘটনার দিন গ্রামের বাজারে সরকারি একটি দিঘির দখল নিয়ে বাদশা মন্ডলের পক্ষের সঙ্গে আলম মন্ডলের সমর্থকদের হাতাহাতি হতে দেখেন। থামাতে গেলে বাদশার লোকজন আচমকা রামদার এক কোপে তাঁর বাঁ হাত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেন। মূমূর্ষ অবস্থায় তাঁকে প্রথমে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে রাজশাহী হাসপাতালে নেওয়া হয়।

কথা বলতে বলতে এক সময় সাইফুল ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কান্না সামলে তিনি বলেন, ‘আমি বাঁ দিক তাকাতে পারিনি। ভাইয়েরা আমার কাটা হাত কবর দিয়া দিছে। একন আমারে পঙ্গু হয়্যা চলতে হবি।’

সাইফুলের পাশে বসে ছিলেন তাঁর বোন মাজেদা বেগম। তিনি জানান, ওই ঘটনায় বাদশা মন্ডলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাঁরা। ঘটনার দিনই পুলিশ দুই আসামিকে (বাদশা ও নুহু) গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আসামিদের মধ্যে আক্কাস আলী, মোয়াজ্জেম হোসেন ও হাফিজুর রহমান এখনো এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গত বুধবার রাতেও আক্কাস তাঁর (মাজেদা বেগম) বাড়িতে গিয়ে তাঁদেরকে মামলা তুলে নিতে বলেন। না হলে তাঁদের মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। লালপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি মর্মান্তিক। ওই ঘটনার পর দুই পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।