পর্যটন নিয়ে অগমেন্টেড রিয়েলিটি অ্যাপসের উদ্বোধন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেশে প্রথমবার দর্শনীয় স্থান নিয়ে তৈরি অগমেন্টেড রিয়েলিটিভিত্তিক অ্যাপস উদ্বোধন করে ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামে একটি সংগঠন। ছবি: শাহাদৎ হোসেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেশে প্রথমবার দর্শনীয় স্থান নিয়ে তৈরি অগমেন্টেড রিয়েলিটিভিত্তিক অ্যাপস উদ্বোধন করে ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামে একটি সংগঠন। ছবি: শাহাদৎ হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দর্শনীয় স্থান নিয়ে অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) অ্যাপস উদ্বোধন করা হয়েছে। পর্যটনভিত্তিক দর্শনীয় স্থান নিয়ে তৈরি এ অ্যাপস দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে অ্যাপসের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন। ‘তিতাসের তারুণ্য’ নামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফেসবুকভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’। এ অ্যাপসের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত পর্যটনের দর্শনীয় স্থান দেখা যাবে।

অনুষ্ঠানে জেলা শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ঐতিহ্য নিয়ে তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্র ও তরুণদের উদ্দেশে তৈরি একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে কয়েকজন শিক্ষার্থী নিজের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন।

বেলা ১১টার দিকে মঞ্চে ওঠেন টেন মিনিটস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আইমান সাদিক। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন যা কিছু শেখো তা লিখে রাখবে। বছর শেষে ৩৬৫, অনেক তথ্য জমবে। জমানো এসব তথ্য দিয়ে একটি বই লেখা সম্ভব। মানুষের সমস্যা হলো মানুষ শুরুটা করতে পারে না।’ তিনি বলেন, শূন্য থেকে এক এর যাত্রা অনেক দূরে। তাই শুরুটা করতে হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের তিন থেকে চারজন করে দলগতভাবে ইংরেজিচর্চা, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া ও সুন্দর করে কথা বলার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বলে থাকি, মানুষ আমাদের পাত্তা দেয় না। আসলে আমরা পাত্তা নিতে জানি না।’

ওয়েডিং ডায়েরির প্রতিষ্ঠাতা প্রীত রেজা বলেন, ‘সকল না-কে না বলতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে। বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, এই চিন্তা বাদ দিতে হবে। যা ভালো লাগে তা মনোযোগ দিয়ে ভালোভাবে করতে হবে।’ তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নিজেদের দুর্বলতাটা আগে জানতে হবে। সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। কোনো কাজে কোনো অজুহাত দেখানো যাবে না। তবেই জিরো থেকে হিরো হতে পারবে।’

শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকটিভিস্ট সোলায়মান সুখন বলেন, ‘জীবনে দরকার ধৈর্য। ধৈর্যশীল হতে হবে। কারণ একজন মানুষের কাছ থেকে সহমর্মিতা ও সম্মান পাওয়া একটা অর্জন। সম্মান করলে সম্মান পাবে। কে কী বলল, এ চিন্তায় দিন না কাটিয়ে নিজেকে গড়তে হবে। কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিবারে বাবা-মা খুশি মানে তুমি পৃথিবীতে সুখী। আর যা আছে, তা নিয়েই খুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে। নারীদের সম্মান করতে হবে।’ তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘কোনো কাজেই অজুহাত দেখাবে না আর অভিযোগ করো না। স্বপ্ন দেখতে হবে, তাকে অর্জন করতে হবে।’

‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র প্রতিষ্ঠাতা বিবর্ধন রায় জানান, পর্যটনভিত্তিক দর্শনীয় স্থান নিয়ে অগমেন্টেড রিয়েলিটি ভিত্তিক অ্যাপসে আপাতত জেলার নিয়াজ মুহাম্মদ ফারুকী পার্কের স্মৃতিসৌধ, জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার দীর্ঘতম প্রতিমা কালভৈরব মন্দির, সরাইল আরিফাইল মসজিদ, মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ কসবার উপজেলার গণকবর ‘কুল্লা পাথর’ ও আখাউড়া উপজেলায় শায়িত বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধির স্থানগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে দর্শনীয় স্থানের সব তথ্য এবং পুরো জায়গা অনলাইনের মাধ্যমে বিচরণ করা যাবে। আস্তে আস্তে জেলার সব উল্লেখযোগ্য জায়গা এই অ্যাপসে যুক্ত করা হবে।

ঢাকার বাগবাইট স্টুডিও নামে একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাপসটি তৈরি করেছে। বাগবাইট স্টুডির প্রতিষ্ঠাতা দেবাশীষ সরকার ও পরিচালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান মহিবুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের শীমু ফেরদৌস ও জিয়াউল করিমসহ আমরা চারজন দুই মাস সময়ে এই অ্যাপসটি তৈরি করেছি। অ্যাপসে একটি কণ্ঠ (ভয়েস ওভার) রয়েছে। অ্যাপসে অন্তর্ভুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে শোনা যাবে। দুই দিনের মধ্যে এটি প্লে স্টোরে সংযুক্ত করা হবে। দুই দিন পর যে কেউ এটি ডাউনলোড করতে পারবেন। তাঁরা বলেন, পর্যটন নিয়ে এই ধরনের অ্যাপস বাংলাদেশে প্রথম।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবু সালেহ মো. নঈমুদ্দিন, আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সোপানুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) আবু সাঈদ, প্রথম আলোর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি শাহাদৎ হোসেন।

অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করে নিউ অটোল্যান্ড, ইনফ্লিক্স আইটি ও জেলা শহরের ফ্রিগো ক্যাফে।