'হত্যা-গুমের' ১৩ বছর পর ফিরলেন তিনি!

নোয়াখালীতে যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে নির্যাতন করে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে মামলা এবং আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়েরের ১২ বছর ৮ মাস ১৮ দিন পর ‘নির্যাতনের শিকার’ নারীকে জীবিত উদ্ধার করে কবিরহাট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। ওই নারীর নাম খতিজা খাতুন (৪০)। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গত সোমবার রাত সোয়া আটটার দিকে মামলার আসামিরাই গৃহবধূকে কোম্পানীগঞ্জের উড়িরচর এলাকা থেকে আটক করে কবিরহাট থানায় সোপর্দ করেন। পরে পুলিশ এ–সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) ওই নারীকে গতকাল মঙ্গলবার নোয়াখালীর ৪ নম্বর আমলি আদালতে হাজির করে। আদালতের বিচারক ২২ ধারায় ওই নারীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার পর তাঁকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেন।

কবিরহাট থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১ জুন তৎকালীন সুধারাম থানার অধীন ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রামের সুলতান আহম্মদের মেয়ে খতিজা খাতুনকে (বর্তমান বয়স ৪০) তাঁর স্বামী মো. দুলাল, শাশুড়ি ফুলবানু, শ্বশুর সাইদুল হকসহ পরিবারের ১০ সদস্য যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যা করেন, লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়।

মামলার বাদী হন খতিজার ভাই আবুল কাশেম। সুধারাম থানার তখনকার উপপরিদর্শক (এসআই) মনু সোহেল ইমতিয়াজ মামলাটি তদন্ত করেন। তিনি একই বছরের ৩০ আগস্ট এজাহারে উল্লেখিত ১০ আসামির বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, তদন্তকালে নির্যাতিত ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়নি। তাঁকে (ভিকটিম) নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন এবং একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দির বরাত দেন অভিযোগপত্রে। মামলার পর বিভিন্ন সময় সব আসামি গ্রেপ্তার হন এবং তাঁরা বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেন।

সূত্র জানায়, সোমবার মামলার আসামিপক্ষের লোকজন পার্শ্ববর্তী কেম্পানীগঞ্জ উপজেলার উড়িরচর এলাকায় ‘হত্যা ও গুম হওয়া’ খতিজার সন্ধান পান। তাঁরা তাঁকে সেখান থেকে ধরে রাত সোয়া আটটার দিকে কবিরহাট থানায় নিয়ে আসেন। পরে থানায় খতিজা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন ২০০৬ সালে তাঁর বাবা-ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা তাঁকে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেন। সেখানে তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করতেন।

খতিজার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, দুই দিন আগে তিনি কোম্পানীগঞ্জের চর এলাহী এলাকার এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বিষয়টি তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন জেনে গেছেন শুনে তিনি সোমবার সকালে উড়িরচর চলে যান। সেখান থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে থানায় নিয়ে এসেছেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফাঁসানোর জন্যই তাঁর পরিবার ওই মামলা করেছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।

কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মোহাম্মদ হাছান প্রথম আলোকে বলেন, যখন মামলাটি হয়েছে তখন কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন ছিল সুধারাম থানার অধীন। তাই মামলাটি ওই থানায় হয়েছে এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাও ওই থানার। মামলায় এজাহারভুক্ত ১০ আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয় আদালতে। মামলাটি বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে গৃহবধূকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে সাক্ষীদের বরাতে উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৬ সালের ওই মামলাটি যে তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই মনু সোহেল ইমতিয়াজ) তদন্ত করেছেন তিনি এরই মধ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পরিবারসহ কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে মামলার বাদী ও সাক্ষীরাই বেশি দোষী বলে তিনি মন্তব্য করেন।