দাবি নিয়ে মেয়রের কাছে ১০ শিক্ষার্থী

নদ্দায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। ছবি: আবদুস সালাম
নদ্দায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। ছবি: আবদুস সালাম

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১০ জনের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে গেছে। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে বসুন্ধরা থেকে ওই শিক্ষার্থীরা নগর ভবনে যান।

ওই শিক্ষার্থীরা হলেন সামিউল, তামজিদ, সবুজ, আরেফিন, আকাশ, আসিফ ইকবাল, ইথেন, ফয়সাল এনায়েত, খসরু ও পারভেজ।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বসুন্ধরায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নদ্দা এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী। এ ঘটনার পর রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তাঁরা সেখানে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। তাঁরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন। আজ সকাল থেকে আবার ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আট দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম তিনটি দাবি হলো—৩০২ ধারার অধীনে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার্জশিট গঠন করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে দ্রুততম সময়ে অপরাধীর বিচার করতে হবে, সুপ্রভাত ও জাবালে নূর পরিবহনের সব বাসের রুট পারমিট বাতিল করতে হবে ও আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে আন্ডারপাস, ওভারব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা ও গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।

যতক্ষণ না দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আইইউবিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক শ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা স্লোগান দিচ্ছেন ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’।

বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারী। এ সময় তাঁরা দুর্ঘটনাস্থলে আবরারের নামে একটি পদচারী-সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। তাঁরা প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। যেভাবেই হোক সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানান। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, আশ্বাসে আস্থা নেই তাঁদের।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমাদের আপনারা দমাতে পারবেন, গালি দিতে পারবেন, তবে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা শেষ হবে না। আসুন, সবাই মিলে সমস্যার সমাধান করি।’

এ সময় শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে তাঁদের দাবি জানাতে থাকেন। বিইউপির উপাচার্য তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

এরপর মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘তোমাদের দাবি যৌক্তিক, আমি তোমাদের ভাই, আমি নগরপিতা, আমি তোমাদের একজন। চলো দুর্ভোগ না করে রাস্তা ছেড়ে দিই।’

তবে, এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একরকম সরে যান তাঁরা।

বসুন্ধরায় শিক্ষার্থীরা যেখানে অবস্থান নিয়েছেন, এর পাশেই একটি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে বিইউপির এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। সালমান তারেক নামের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আগেও আন্দোলন হয়েছে, তখনো আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। জাবালে নূর বাস এখনো চলছে। বছর দেড়েক আগে এ জায়গায় পদচারী-সেতু করার কথা ছিল, কিন্তু দেখতেই পাচ্ছেন হয়নি। গতকাল আবরারের মৃত্যুর পর সুপ্রভাত বাসের চলাচল বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান মেয়র। অথচ কালকেই ওই পরিবহনের বাস চলতে দেখা যায়। তাই আশ্বাসে নয়, আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’