কষ্টের দিন বিদায় নিয়েছে লোভাদের স্কুলে

লোভাদের এখন আর স্কুলে কষ্ট করতে হয় না। টয়লেটে রয়েছে প্রয়োজনীয় সবই। ছবি: ওয়াটার এইডের সৌজন্যে
লোভাদের এখন আর স্কুলে কষ্ট করতে হয় না। টয়লেটে রয়েছে প্রয়োজনীয় সবই। ছবি: ওয়াটার এইডের সৌজন্যে

ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকারী লোভা খুবই মেধাবী ছাত্রী। বয়স ১৫। আমলাগাছি বিএম হাইস্কুলে ১০ শ্রেণির ছাত্রী সে। তার মা এই স্কুলেই শিক্ষকতা করেন। বাবা স্থানীয় আবুবকর ফাজিল মাদ্রাসায় প্রাণিবিদ্যার প্রভাষক।

দুই বোনের মধ্যে লোভা বড়। ওর প্রথম মাসিকের অভিজ্ঞতার কথা আমাদের বলে। তখন সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ওর বয়সের আরও অনেক মেয়ের মতো প্রথম মাসিকের পর রক্ত দেখে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।

প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকেই লোভার নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রথমে অনিয়মিত মাসিক হতো। কখনো মাসে দুবারও হতো। অস্বাভাবিক রক্ত যেত। তলপেট, দুই হাত, পা, কোমরে ব্যথা করত। সাময়িক উপশমের জন্য ব্যথার ওষুধও খেত। এখনো মাসিকের সময় শারীরিক দুর্বলতার জন্য এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয় লোভাকে।

মাসিক শুরুর পর পরিবারের লোকজন লোভাকে কাপড় ব্যবহার করতে দেয়। কাপড়ে ওর বেশ অস্বস্তি হতো। স্কুলের শৌচাগারটির ভয়াবহ অবস্থা থাকায় ওই সময় স্কুলে যাওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে অসুস্থ না হওয়ার পরও মাসিকের দিনগুলোয় ও স্কুলে যেত না। মাসিকের সময় স্কুলে দীর্ঘক্ষণ কাপড় ব্যবহারে লোভার জ্বালাপোড়া করত এবং একসময় সংক্রমণও হয়ে যায়। এরপর লোভা প্যাড ব্যবহার শুরু করে।

লোভা বলে, স্কুলের আগের শৌচাগারটি ভয়ানক নোংরা ছিল। অগণিত শিক্ষার্থী আর শিক্ষক ওই শৌচাগারে যেত। শৌচাগারে ঢুকতে গেলে এক লম্বা সারি হতো। আর ভেতরে প্রয়োজনীয় সাবান বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সামগ্রীর বালাই ছিল না। টিসু থাকত না, সাবান থাকত না। পানির অভাবে শৌচাগার ব্যবহার করা যেত না। বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। লোভার স্কুলে কাপড় রাখা, ধোয়া ও শুকানোর জায়গা ছিল না। এ কারণে মাসিকের ব্যবহার করা কাপড় দূরে ছুড়ে ফেলতে হতো।

স্কুলের শৌচাগারের অবস্থা কি আগের মতো আছে? হাস্যোজ্জ্বল লোভার উত্তর, ‘না।’ স্কুলে এখন মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থীর আলাদা শৌচাগার। শুধু তা-ই না, মেয়েদের মাসিকের ব্যবহার করা প্যাড রাখার জন্যও ব্যবস্থা আছে। কাপড় শুকাতে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত আলো আসে—এমন ব্যবস্থাও আছে। কাপড় পরিষ্কার করার জন্য আছে নির্দিষ্ট জায়গা। সাবান, টিস্যু, আয়না, বেসিন—সবই আছে শৌচাগারে।

লোভাদের বাড়ি থেকে স্কুল দূরে না। টিফিনের সময় ও বাসায় এসেই প্যাড পাল্টাতে পছন্দ করে। কিন্তু এটা ভেবে ওর ভালো লাগে যে অন্তত ওর সহপাঠীরা একটা ভালো শৌচাগার পেয়েছে। যেদিন প্যাড পাল্টাতে বাড়ি যায় না, সেদিন ও স্কুলের শৌচাগারেই অনায়াসে পরিবর্তন করে। এখানে বসার জায়গায় বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব করে। ঘণ্টা পড়লেই ছুটে যায় ক্লাসে।