র্যাব গ্রেপ্তার করার ৮ ঘণ্টা পর যুবকের মৃত্যু

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে এক যুবক গ্রেপ্তার হওয়ার প্রায় আট ঘণ্টা পর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মৃত্যু হয় যুবকের। র‌্যাবের দাবি, ওই যুবক মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। গ্রেপ্তার এড়াতে অতিরিক্ত ইয়াবা বড়ি খাওয়ার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়।

মারা যাওয়া যুবকের নাম মো. শাকিল খান (২৮)। শাকিলের বাড়ি দশমিনা উপজেলার পূর্ব আলীপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মো. শাহ আলম খান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শাকিলের মৃত্যু হয়।

মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শাকিলকে গতকাল বিকেলে দশমিনা উপজেলার রমানাথ সেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে গ্রেপ্তার করে পটুয়াখালী র‌্যাব-৮–এর একটি দল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও শাকিলের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শাকিলকে সাদাপোশাকধারী কয়েকজন আটক করে মারধর করে। স্থানীয় লোকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে সাদাপোশাকধারী ব্যক্তিরা র‌্যাবের পরিচয়পত্র দেখালে স্থানীয় লোকজন সরে দাঁড়ায়।

র‌্যাবের দাবি, গ্রেপ্তার এড়াতে শাকিল সঙ্গে থাকা অনেক ইয়াবা বড়ি খেয়ে ফেলেন। এ কারণে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শাকিল ছিলেন একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা ছিল।

শাকিলের এক স্বজন অভিযোগ করেন, শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিকেল সাড়ে তিনটায়। অথচ বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে রাত ১১টা ১০ মিনিটে। গ্রেপ্তারের আগেই শাকিল ইয়াবা ট্যাবলেট খেয়ে থাকলে দীর্ঘ সময়ে কেন শাকিলকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি?
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা আখতারউজ্জামান বলেন, গতকাল রাত ১১টা ১০ মিনিটের দিকে র‌্যাবের সদস্যরা শাকিলকে অসুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করান। র‌্যাবের সদস্যরা জানান, শাকিল ইয়াবা বড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ওই সময় শাকিল কথা বলতে না পারলেও ইয়াবা বড়ি খাওয়ার কথা মাথা নেড়ে স্বীকার করেন। তাঁর পাকস্থলী ওয়াশের জন্য ওয়াশকক্ষে নেওয়া হলে তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসক বলেন, অতিরিক্ত ইয়াবা বড়ি সেবনে বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হতে পারে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি খাতার তথ্য অনুযায়ী, র‌্যাব-৮–এর দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোয়েব আহম্মেদ ভর্তি করান শাকিলকে। এএসপি সোয়েব আহম্মেদ খান বলেন, ‘শাকিলকে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় নয়, রাত সাড়ে নয়টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তখন সে তাঁর সঙ্গে থাকা অসংখ্য ইয়াবাবড়ি খেয়ে ফেলে। পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। শাকিলের স্বজনদের বক্তব্য মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর।’

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় বাউফল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।