আবজাল দেশ ছেড়ে থাকলে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: সচিব

মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত
মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা হোসেন গোপনে দেশ ছাড়লে তাঁদের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত এ কথা জানিয়েছেন।

আজ রোববার দুদক কার্যালয়ে নিজ দপ্তরে দুদক সচিব বলেন, আবজাল দম্পতির দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা দেশ ত্যাগ করেছেন কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে তাঁরা দেশ ছেড়ে গেছেন। কিন্তু এর সপক্ষে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে জানতে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা এ-সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে চিঠি লিখেছেন। উত্তর আসার পর যদি জানতে পারি আবজাল ও তাঁর স্ত্রী দেশ থেকে পালিয়েছেন, তাহলে এ কাজে কারা তাঁদের সহায়তা করেছেন, তাঁদের বিষয়টি অনুসন্ধান করা হবে। এ ক্ষেত্রে দুদকের অনুসন্ধান কাজে অসহযোগিতার অভিযোগসংক্রান্ত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।’

আবজাল দম্পতির ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আদালতের আদেশে আবজাল দম্পতির সব ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত রাখার ( হিসাব ফ্রিজ) পরও কীভাবে তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন, সে বিষয়টিও অনুসন্ধানের আওতায় নেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হবে।

আবজাল দম্পতির যেসব স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো দুদক সেই সম্পদের রিসিভার (রক্ষণাবেক্ষণকারী) হবে বলেও জানান দুদক সচিব। তিনি বলেন, আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ পর্যন্ত অনুসন্ধানে আবজালের নামে রাজধানীর উত্তরার বাড়িসহ ঢাকায় ৬টি প্লট, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় একাধিক প্লট ও জমি পাওয়া গেছে। তাঁর স্ত্রীর রুবিনা খানমের নামে উত্তরায় ২টি বাড়ি, বাউনিয়া মৌজায় ২টি প্লট, কেরানীগঞ্জে দোকান, জোয়ারসাহারা ও বাড্ডায় ফ্ল্যাট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ২টি প্লট, সাভারের বিরুলিয়ায় জমি, ফরিদপুরে একাধিক জমি ও প্লটের সন্ধান মিলেছে। 

দুদক সূত্র জানায়, সংস্থার একটি দল কয়েক দিন ধরে আবজাল দম্পতির খোঁজে সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তাদের হদিস মিলছে না। দুদকের কর্মকর্তারা কোনো ধারণাও করতে পারছেন না ওই দম্পতি আসলে এখন কোথায়? দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও আবজাল দম্পতি দেশ ছেড়েছেন কি না, তা নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি দেয়ে দুদক। ১৩ মার্চ দুদকের উপপরিচালক ও আবজালের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম এই চিঠি দেন। চিঠিতে আবজাল ও তাঁর স্ত্রীর পাসপোর্ট নম্বর, এনআইডি নম্বর দিয়ে তাঁদের বিদেশ যাওয়া-আসার তথ্য চাওয়া হয়। চিঠিতে ৬ জানুয়ারি দেওয়া চিঠির সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়, ওই চিঠিতে এই দম্পতির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
গত ১০ জানুয়ারি আবজালকে দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের অনুসন্ধান দল। ২১ জানুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক, অর্থাৎ হস্তান্তর বা লেনদেন বন্ধ এবং ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন জব্দ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত। তা ইতিমধ্যে কার্যকরও হয়েছে। তাঁদের অবৈধ স্থাবর সম্পদ ইতিমধ্যে ক্রোক করা হয়েছে। উত্তরার ২টি বাড়ি, দিয়াবাড়ির ২টি প্লট ও বাড্ডায় একটি ফ্ল্যাটে গত ১৮ মার্চ আদালতের ক্রোকের নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।