রক্ষা পাচ্ছে শতবর্ষী ভবন সরে যাবে হাসপাতাল

গতকাল দুপুরে সিলেটের ঐহিত্যবাহী স্থাপনা আবু সিনা ছাত্রাবাস পরিদর্শনে যান সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।  ছবি: প্রথম আলো
গতকাল দুপুরে সিলেটের ঐহিত্যবাহী স্থাপনা আবু সিনা ছাত্রাবাস পরিদর্শনে যান সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের শতবর্ষী আবু সিনা ছাত্রাবাস আর ভাঙা হবে না। এটি রক্ষণাবেক্ষণ করে বিভাগীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠানো হবে। আর ছাত্রাবাসের জায়গায় জেলা হাসপাতালও স্থানান্তর করা হবে।
গতকাল রোববার সকালে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে এ কথা বলেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সরকারের বিগত মেয়াদে সিলেট-১ আসনের সাংসদের দায়িত্বে থাকাকালে আবুল মাল আবদুল মুহিতের উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি ছিল এই হাসপাতাল স্থাপন। তিনি জানিয়েছেন, একই এলাকায় থাকা শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালে রূপান্তরের পর জেলা হাসপাতাল স্থাপন প্রস্তাব হয়েছিল ২০১২ সালে। ওই সময় শতবর্ষী ভবন রক্ষা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কোনো তথ্য জানাননি। এতে বিস্ময় প্রকাশ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পাশাপাশি হাসপাতাল থাকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে সরিয়ে নেওয়া উচিত। হাসপাতাল সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করব, আবু সিনা ছাত্রাবাস নামের ভবনটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে।’ প্রস্তাবিত বিভাগীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে এখানে। সিলেটে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ ছিল জানিয়ে মুহিত আরও বলেন, ‘অনেক কাজই করেছি। কিন্তু এ কাজটা করা সম্ভব হয়নি, এবার আবু সিনা ছাত্রাবাসটি কাজে লাগিয়ে একটি জাদুঘর তৈরি করা সম্ভব হবে৷ সরকারও এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে।’
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী আবু সিনা ছাত্রাবাস নামে ব্যবহৃত ভবনটি ১৮৫০ সালে নির্মিত। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত সিলেটের প্রথম সংবাদপত্র শ্রীহট্ট প্রকাশ-এর ছাপাখানা ছিল এই ভবন। শুধু এই তথ্যে ভবনটি শতবর্ষী। পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য। পুরাকীর্তি আইন ১৯৬৮ অনুযায়ী এটি ভাঙা সম্পূর্ণ বেআইনি একটি কাজ। আইনে বলা আছে, কোনো ভবন বা স্থাপনা মূলত সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক বা ব্যবহারিক মূল্য বিবেচনায় সংরক্ষণ করা বা ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়।
এ আইন উপেক্ষা করে আবু সিনা ছাত্রাবাস স্থানান্তরিত করে স্বাস্থ্য বিভাগীয় অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল নির্মাণকাজ সম্প্রতি শুরু হয়। শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে নতুন হাসপাতাল এবং ওই এলাকার অন্তত এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাপসাতালসহ আরও অন্তত অর্ধশতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল থাকার পরও নতুন হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর ঐতিহাসিক ভবনটি ভেঙে সেখানে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার ১৫ তালা ভবন নির্মাণকাজ শুরু করলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে এ নিয়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বাপার পক্ষ থেকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে ১২ মার্চ একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে ভবন রক্ষা ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৩ মার্চ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এরপরও প্রকল্পকাজ অব্যাহত থাকায় বড় পরিসরে গত বুধবার রাতে সিলেটের প্রতিনিধিত্বশীল বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, নাগরিক, সাংস্কৃতিক, স্থাপত্য, পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষার সংগঠনের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ভবনটি রক্ষায় ‘শত নাগরিক’ উদ্যোগে সমন্বিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ কর্মসূচির শুরুতে গত শুক্রবার শত নাগরিকের একটি বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
আবু সিনা ছাত্রাবাস পরিদর্শনকালে সাবেক অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সি এম তোফায়েল সামি, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, ভাষাসৈনিক মতিন উদদীন জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী, বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী, শাহি ঈদগাহর মোতোয়াল্লি জহির বক্ত, বাংলাদেশ মণিপুরি সাহিত্য সংসদের সভাপতি এ কে শেরাম, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের (কেমুসাস) সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।