প্রকাশ্যে মেঘনার বালু লুট

সোনারগাঁ উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় মেঘনা নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু বাল্কহেডে তোলা হচ্ছে। শনিবার সকালে তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
সোনারগাঁ উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় মেঘনা নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু বাল্কহেডে তোলা হচ্ছে। শনিবার সকালে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় ড্রেজারের (খননযন্ত্র) সাহায্যে মেঘনার বালু লুট করছে একটি সন্ত্রাসী চক্র। প্রকাশ্যে নদীর বালু লুটপাট করলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকায় ইজারা ছাড়াই ৩০ থেকে ৪০টি ড্রেজার দিয়ে নিয়মিত দিনরাত মেঘনার বালু বাল্কহেডে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছে একটি সন্ত্রাসী চক্র। নদীর তীরবর্তী হারিয়া, নুনেরটেক, সোনাময়ী ও মামরকপুর গ্রামের মানুষ বালু সন্ত্রাসীদের বাধা দেওয়ায় গত এক মাসে নুরু মিয়া, আমজাদ হোসেন, আলমগীর মিয়া, নুর হোসেনসহ ১০ গ্রামবাসীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। বালু সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে সমঝোতা করে প্রকাশ্যে বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।

গত শনিবার আনন্দবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৪০টি বড় ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে বালু তুলে বাল্কহেডে ভরা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন যাতে এতে বাধা দিতে না পারে, সে জন্য নদীতে লাঠি নিয়ে একদল যুবক পাহারা দিচ্ছেন। গ্রামবাসী জানান, সরকারের কাছ থেকে কোনো রকম অনুমতি বা ইজারা না নিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।

আনন্দবাজার এলাকার বাসিন্দারা জানান, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে তাঁর সহযোগী মামুন, রুবায়েত হোসেন, রকি মিয়াসহ ২০-২৫ জনের একটি চক্র স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে বালু লুটপাট করছে।

নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে বালু কেটে নেওয়ার কারণে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের আনন্দবাজার, মামরকপুর, হারিয়া, সোনাময়ী, সাতভাইয়াপাড়াসহ সাত গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি ভেঙে যাচ্ছে। যেকোনো সময় ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

সাতভাইয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আলী আজগর বলেন, ‘আমাদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার জন্য ভোট দিয়ে যে জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেছি, তাঁরাই অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আমাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন কর দিচ্ছেন। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা একাধিকবার ইউএনওকে স্মারকলিপি দিয়েছি। বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছি। আন্দোলন করার পর প্রশাসন অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’ প্রশাসনের সহযোগিতায় বালু লুটপাট করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

গ্রামবাসীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈদ্যেরবাজার ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকার কয়েকজন অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত এ কথা সত্য। তাঁরা সবাই আমার নাম ব্যবহার করছে। আমি সরাসরি এ কাজে জড়িত নই।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল মিয়া শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর তীর ঘেঁষে ড্রেজারের সাহায্যে বালু উত্তোলনের কারণেই ওই এলাকায় নদীভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। যেহেতু নদীর বালুমহালগুলোর ইজারা জেলা প্রশাসন দিয়ে থাকে, তাই জেলা প্রশাসনেরই দায়িত্ব এসব অবৈধ ড্রেজিং বন্ধ করা।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। অবৈধভাবে যদি কেউ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে, তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’