জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বখেড়ুয়া নদীর ওপর নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা ছবি।  প্রথম আলো
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বখেড়ুয়া নদীর ওপর নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা ছবি। প্রথম আলো

সেতুর অর্ধেক অংশ পাকা, অর্ধেক অংশে লোহার পাটাতন। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় পাটাতনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। সেতুর উত্তর পাশ হেলে পড়েছে। এসব কারণে যাত্রী, চালক ও পথচারীরা এই সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

এই দুরবস্থা নীলফামারীর ডোমার উপজেলার গোমনাতি ইউনিয়নের আমবাড়ি ও গোমনাতির মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খেড়ুয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির। এক যুগের বেশি সময় ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে ১০ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সেতু এলাকার স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে খেড়ুয়া নদীর ওপর ওই সেতু যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও এটি মেরামত বা সংস্কার করার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে না সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নীলফামারী কার্যালয়। তবে সওজের নীলফামারী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হামিদুর রহমান এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁরা ওই স্থানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। বরাদ্দ পেলে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করবেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, নড়বড়ে ওই সেতুর অর্ধেক অংশ পাকা এবং বাকি অর্ধেক অংশে লোহার পাটাতন বিছানো। পাটাতনগুলো সরে গিয়ে ৮–১০টি স্থানে ফাঁকা হয়ে আছে। এ কারণে ভারী যানবাহনগুলো চলাচল করছে অতি সাবধানে। এই সময় দুটি ভ্যানের চাকা পাটাতনের ফাঁকে আটকে পড়তেও দেখা গেছে। এ ছাড়া সেতুর লোহার পাটাতন বিছিয়ে রাখা অংশের উত্তর পাশ হেলে পড়ে আছে। সেতুর কয়েকটি স্প্যান ধসে পড়ায় এটি একদিকে হেলে পড়ে আছে।

সওজ নীলফামারী কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা সড়কপথে যাতে পাকিস্তানি সেনারা গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে না পারে, সে জন্য সেতুর একাংশ উড়িয়ে দেন। স্বাধীনতা লাভের কয়েক বছর পর সেতুর যে অংশ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই অংশে বেইলি সেতু করা হয়। এরপর এটি আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে সেতুটি এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট।

সেতুটির ওপর দিয়ে প্রায়ই চলাচল করেন ট্রাকচালক মহির উদ্দিন (৪০)। সেতুর দুরবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ডিমলা থেকে এই পথে পঞ্চগড়ে যাচ্ছি। কিন্তু সেতুটির যে অবস্থা, তাতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘এই পথ দিয়ে না গেলে ডিমলা থেকে ডোমার হয়ে পঞ্চগড়ে যেতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হয়। তাই সময় ও দূরত্ব কমাতে এ পথে যাচ্ছি।’

গোমনাতি গ্রামের আরেক বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, এই পথে রংপুর, ডোমার হয়ে চিলাহাটি, পঞ্চগড় এবং পঞ্চগড় থেকে চিলাহাটি হয়ে ডিমলা, ডালিয়া, লালমনিরহাটের বুড়িমারীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন সহস্রাধিক যানবাহনে ১০ হাজার মানুষ চলাচল করে। প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার আমবাড়ি হাট বসে। সেদিন ওই সেতুর দুই পাশে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এ ছাড়া গোমনাতিতেও নিয়মিত বড় বাজার বসে। দুই বাজারে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালপত্র আনা–নেওয়া করতে হয় ওই সেতু দিয়ে।

স্থানীয় লোকজন জানান, দীর্ঘদিন মেরামত না করায় সেতুটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। এতে সেতুটি ধসে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি নির্মাণ করা হলে রংপুর ভায়া চিলাহাটি, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কম সময়ে চলাচল করতে পারবে এসব এলাকার মানুষ। এতে পরিবহন খরচও কমবে।

এ বিষয়ে সওজের নীলফামারী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হামিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতু অপসারণ করে জরুরি ভিত্তিতে নতুন সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। সেতুটি নির্মাণে প্রায় ১২ কোটি টাকা প্রয়োজন। সেতু নির্মাণে প্ল্যানিং কমিশনে প্রকল্প দেওয়া আছে।’