তবুও নত হননি মুনীরউজ্জামান

এ এন এম মুনীরউজ্জামান
এ এন এম মুনীরউজ্জামান

ঘর থেকে টানতে টানতে বাড়ির সিঁড়িঘরের সামনে নিয়ে যাওয়া হয় মুনীরউজ্জামানকে। পাকসেনারা মেঝেতে বসতে বলে তাঁকে। মুনীরউজ্জামান বসতে অস্বীকৃতি জানান। পাকসেনারা সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পায়ে বেয়নেট দিয়ে আঘাত করে। পায়ের আঘাত সহ্য করতে না পেরে সম্ভবত মাটিতে লুটিয়ে পড়ার অবস্থা হয় তাঁর। ঠিক তখনই মাথায় গুলি করা হয়। চিরতরে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান এ এন এম মুনীরউজ্জামান। পাকসেনার কথায় নয়, একমাত্র বন্দুকের গুলিই তাঁকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে বাধ্য করে। সেই কালরাতে তিনি একা নন, শিক্ষাবিদ, অধ্যাপকের পাশাপাশি তাঁর ছোট ভাই অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান নবাব, বড় ছেলে এ কে এম আকরামুজ্জামান, ভাগনে নাসিরুল ওহাবকে এইভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের সুন্দর জোছনা রাত হয়ে যায় কালরাত।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন আবাসিক হলের সামনে এসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হ্যান্ডমাইকে তিনজনের নাম ধরে ডাকেন। কেউ বের হয়ে আসছেন না দেখে তারা সরাসরি উঠে যায় ভবনের তিনতলায়। ৩৪/ই নম্বরের ফ্ল্যাটের দরজায় সামনে লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ফেলে। ওই শব্দে মুনীরউজ্জামান নিজে এগিয়ে আসেন। পাকসেনারা জানতে চায় মুনীরউজ্জামান কে? নিজের পরিচয় দেন তিনি। তারপরই তাঁকে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় সেই সিঁড়িঘরে।

অন্য সবার মতো তাঁর লাশও জগন্নাথ হলে গেটের বাইরে গাছতলায় সারা দিন ফেলে রাখা হয়। পরদিন সন্ধ্যায় তাঁর লাশ অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেবসহ অন্যদের সঙ্গে জগন্নাথ হলের মাঠে গর্তে গণকবর দেওয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁদের কবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসংলগ্ন স্থানে সমাহিত করা হয়।

অধ্যাপক মুনীরউজ্জামানের জন্ম যশোর জেলার কাচেরকোল গ্রামে, ১৯২৪ সালে। পড়েছেন নড়াইল হাইস্কুল, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ সালে এমএসসি (পরিসংখ্যান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হয় পরিসংখ্যান, সংখ্যাতত্ত্ব ও বিজ্ঞান গবেষণা ও ইনস্টিটিউট (আইএসআরটি)। বর্তমানে এটির নামকরণ করা হয়েছে পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।