স্মিত হাসির মানুষটি

আতাউর রহমান খান খাদিম
আতাউর রহমান খান খাদিম

আতাউর রহমান খান খাদিমের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ফিলিপস ইলেকট্রিক কোম্পানির এক্স-রে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করেছেন। স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন ১৯৫৪ সালে। তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহ ছিল বলেই আরও পড়ালেখা করতে চেয়েছিলেন তিনি। 

মেধাবী ছাত্র আতাউর রহমান খান খাদিমের স্কুলজীবন কেটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে। জর্জ এইচ ই বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক (১৯৪৮) পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে প্রথম আইএসসি (১৯৫০, প্রথম বিভাগে একাদশ) পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শ্রেণিতে ভর্তি হন। অনার্স (১৯৫৩, প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয়) ও এমএসসি (১৯৫৪, দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম) পাস করে ফিলিপস ইলেকট্রিক কোম্পানিতে এক্স-রে প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে উচ্চশিক্ষার্থে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউটে পড়ার জন্য তিনি জার্মানির গোটিংজেনে যান। ১৯৬০-এর শেষার্ধে সেখান থেকে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ফেলো হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫-এর ৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক নিযুক্ত হন।

স্বল্পভাষী মানুষটিকে যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বলেন, সব সময় তাঁর মুখে স্মিত হাসি লেগে থাকত। ঘড়ি ধরে ক্লাসে আসতেন তিনি। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ক্লাস নিতেন। তাঁর নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ আর দায়িত্ববোধের প্রশংসা করতেন সবাই। তিনিও সবার কাছ থেকে সেটা প্রত্যাশা করতেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কীভাবে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহত হন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে যত দূর জানা যায়, সে সময় তিনি নিজ বাসভবনেই ছিলেন। আতাউর রহমান খান খাদিম বিয়ে করেননি। থাকতেন শহীদুল্লাহ্ হলের (তখন ঢাকা হল) ওয়েস্ট হাউসের বাবুর্চিখানার ওপর, দ্বিতীয় তলায় শিক্ষকদের বাসভবনে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর শহীদুল্লাহ্ হলে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। নাম না জানা অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে গণকবরে স্থান হয়েছিল বিজ্ঞানমনস্ক এই মেধাবী মানুষটিরও।

খান খাদিমের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাড়ের দ্বিতীয় বর্ষের মাইনর ল্যাবরেটরির নামকরণ করা হয় ‘খান খাদিম ল্যাবরেটরি’। এখানেই তিনি শিক্ষার্থীদের প্রথম ব্যবহারিক পাঠ দিয়েছিলেন।