গতবার ছিল না দাম এবার ধরেনি আম

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ব্যাপক জনপ্রিয় হচ্ছে আমবাগান। দিন দিন বাড়ছে আমবাগানের সংখ্যা। প্রতিবছর গড়ে ৫০ হেক্টর জমিতে নতুন নতুন আমবাগান হচ্ছে। তবে আমবাগানের মালিক ও চাষিরা বলছেন, গত বছর প্রচুর আম এলেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় তাঁদের লোকসান গুনতে হয়েছে। এ বছর গাছে আসেনি কাঙ্ক্ষিত মুকুল। দেখা নেই আমের গুটি। ফলে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বাগানমালিকেরা।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ৮১০ হেক্টর জমিতে আমবাগান করা হয়েছে। ২০১৩ সালে এ উপজেলায় আমবাগান ছিল ৬৫০ হেক্টর জমিতে। এ উপজেলায় হিমসাগর, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জাতের আমের বাগান করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ বাগান হিমসাগর আমের। মোট বাগানমালিক রয়েছেন ৫১৫ জন। উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আমের বাগান রয়েছে মাহমুদপুর, ভাদুরিয়া, দাউদপুর ও বিনোদনগর ইউনিয়নে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সরেজমিনে আমবাগানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গাছগুলোতে আমের গুটি নেই বললেই চলে। বিশেষ করে হিমসাগর জাতের বড় আমগাছগুলোতে গুটি খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। অন্যান্য জাতের আমের গাছেও খুব একটা গুটি চোখে পড়েনি।
উপজেলার টুপিরহাটের আমবাগানের মালিক একরামুল হক জানান, আমের মুকুল আসার জন্য মৌসুমের শুরুতে একবার বৃষ্টি প্রয়োজন। কিন্তু এবার সে বৃষ্টি হয়নি। বরং মুকুল আসার পর হঠাৎ বৃষ্টিতে তা ঝরে পড়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব গাছে মুকুল এসেছে, সেসব গাছে ওষুধ প্রয়োগ করেও লাভ হচ্ছে না। আমের মুকুল ঝরে পড়ছে। তাঁর ১২ বিঘা জমির হিমসাগর বাগান থেকে গত বছর ৮০০ মণ আম পেয়েছিলেন। এবার ১০০ মণ আম পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
জামতলী গ্রামের আমচাষি শহিদুল ইসলাম কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সব নিয়ম মেনে গাছের প্রয়োজনীয় সব পরিচর্যা করেছেন। কিন্তু কোনোভাবেই গুটি থাকছে না। শহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর ছয় বিঘা জমিতে হিমসাগর জাতের আমবাগান রয়েছে। গত বছর সেই বাগান থেকে ৪০০ মণ আম সংগ্রহ করেন। ওই বছর রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের হিমসাগর জাতের আম গড়ে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও তাঁদের আম ৬০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি করতে পারেননি। এতে তাঁদের চরম লোকসান গুনতে হয়েছে। এ বছর বাগানে ১০ মণ আম হবে কি না, তা নিয়ে তাঁর সন্দেহ রয়েছে।
দরিয়া গ্রামের আমচাষি আবুল কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত বছর ১৮ বিঘার একটি হিমসাগর জাতের আমের বাগান ৩ বছরের জন্য ১৩ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছিলেন। গতবার আম পেয়েছিলেন ৬০০ মণ। প্রতি মণ আম গড়ে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। ওই দামে বিক্রি করে তাঁকে ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে।
মাহমুদপুর ফলচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের পরিকল্পনা সম্পাদক মো. মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি বিঘায় গড়ে ১৬টি আমগাছ থাকে। প্রতি বিঘায় গড়ে ৫০ মণ আম হয়। নবাবগঞ্জের আমচাষীরা গত বছর প্রতি মণ আমে গড়ে ৫০০ টাকা করে লোকসান গুনেছেন। সে হিসাবে গত বছর নবাবগঞ্জের আমবাগানের মালিক এবং চাষিরা ১৫ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনেছেন। এ বছর বাগানমালিক এবং আমচাষিরা গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু মুকুল ও আমের গুটি না থাকায় অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। বাগানমালিক ও চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, খাদ্য উপাদানের অসমতার কারণে কোনো বছর ফলন ভালো হলে পরের বছর ফলন কম হয়। সাধারণত ১৫ বছরের বেশি বয়সের আমগাছগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি হয়। তা ছাড়া এবার আবহাওয়াও অনুকূলে ছিল না। মৌসুমের শুরুতে বাগানে খাদ্য উপাদানের পর্যাপ্ত জোগান ও সেচ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। গাছে থাকা গুটি রক্ষায় কীটনাশক ব্যবহার এবং বাগানের প্রতিটি
গাছ যাতে আলো পায়, সে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ
দেওয়া হয়েছে।