ব্যানার-পোস্টারের দখলে লালবাগ কেল্লার দেয়াল

ব্যানার–পোস্টারে ভরে গেছে লালবাগ কেল্লার চারপাশের দেয়াল। সম্প্রতি তোলা ছবি।  প্রথম আলো
ব্যানার–পোস্টারে ভরে গেছে লালবাগ কেল্লার চারপাশের দেয়াল। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো

অমনোযোগী শিশুর পড়াশোনায় মনোযোগ ফেরানোর কোচিং সেন্টার, হারানো বিজ্ঞপ্তি, চাকরির বিজ্ঞাপন, বাসা ভাড়া, ওয়াজ মাহফিলের পোস্টার, শুভেচ্ছাবার্তা, রাজনৈতিক পোস্টার এমনকি শোক সংবাদের ফেস্টুন—সবাই লাগানো হয়েছে ঢাকার অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক স্থাপনা লালবাগ কেল্লার দেয়ালে। পাশে আছে কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তাও, ‘পুরাকীর্তির দেয়ালে পোস্টার, ব্যানার লাগানো ও ক্ষতিসাধন করা দণ্ডনীয় অপরাধ’। কিন্তু কেউ তার তোয়াক্কা করছে না।
প্রত্নতত্ত্ব আইন, ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী পুরাকীর্তির স্থাপনায় পোস্টার লাগানো বা লেখন দণ্ডনীয় অপরাধ। সর্বোচ্চ সাজা ছয় মাসের কারাদণ্ড। কিন্তু লালবাগ কেল্লার চারপাশের দেয়ালে দীর্ঘদিন ধরে এসব পোস্টার, ব্যানার লাগানো থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি লালবাগ দুর্গ ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় কারও বিরুদ্ধে সাজার আইন কার্যকর করা যাচ্ছে না।
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, পেরেক মেরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে কেল্লার দেয়ালে। আছে দেয়ালে স্থায়ীভাবে রং করে লেখা বিজ্ঞপ্তিও। মূল ফটকের পাশের দেয়াল সাঁটানো হয়েছে কোচিং সেন্টার, স্থানীয় ওয়াজ মাহফিল ও শোক সংবাদের পোস্টার, ব্যানার। দক্ষিণে শায়েস্তা খান রোড লাগোয়া দেয়ালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পোস্টারের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে রং করে লেখা হয়েছে দুটি গানের স্কুল ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। টানানো হয়েছে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেস্টুন। কেল্লার মোড়ের দুর্গের দেয়ালে ছেয়ে গেছে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যানার-পোস্টারে। ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজি সেলিমকে অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক দুটি ব্যানার টানিয়েছেন লালবাগ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ইলিয়াস আহম্মেদ, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সুজন আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাহাত হোসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেল্লার মোড়ের এক দোকানি জানান, ‘রাজনৈতিক ব্যানারগুলো জাতীয় নির্বাচনের সময় লাগানো। দুই মাসেও সরানোর উদ্যোগ নিতে দেখিনি কাউকে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালবাগ দুর্গ ও জাদুঘরের কাস্টডিয়ান হালিমা আফরোজ প্রথম আলোকে বলছেন, ‘কিছুদিন পরপরই এগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর আবার লাগায়। যাদের নামে ব্যানার লাগানো হয়, তাদের কাছে জানতে চাইলে অস্বীকার করেন। কর্মীদের ওপর দায় চাপান। কর্মীদের নাম–পরিচয়ও বলেন না। এদিকে বেশির ভাগ পোস্টার ব্যানার রাতে লাগানোয় আমরাও কাউকে চিহ্নিত করতে পারি না।’
শনিবার সকালে লালবাগ দুর্গে ঘুরতে এসেছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক অ্যাডাম স্কট। আলাপচারিতার সময় পুরাকীর্তির দেয়ালে পোস্টার, ব্যানার প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত অনেক দেশ ঘুরেছি। যেখানেই গিয়েছি ছুটে গিয়েছি সেখানকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোতে। কিন্তু এমন অবস্থা কোথাও দেখিনি।’