আ.লীগ নেতাদের নাম ঘোষণা হয়নি তাই...

বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কসরত প্রদর্শনী। ছবি খোরশেদ আলম
বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কসরত প্রদর্শনী। ছবি খোরশেদ আলম

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম ঘোষণাকে কেন্দ্র করে লাঞ্ছিত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গোপনীয় সহকারী (সিএ) ও এক স্কুলশিক্ষক। তাঁরা দুজনেই অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন। আজ মঙ্গলবার বগুড়ার শাজাহানপুরে উপজেলার মাঝিড়া মডেল উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠান মাঝিড়া মডেল উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হয়। আজ সকাল ৮টায় অনুষ্ঠান শুরু করার জন্য সঞ্চালক ইকবাল ও আরেক নারী সঞ্চালক অতিথিদের নাম ঘোষণা করেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চালকেরা সভাপতি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ফুয়ারা খাতুন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সরকার বাদল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান, উপজেলা সভাপতি দিলীপ কুমার চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতার নাম ঘোষণা করেন। নাম অনুযায়ী প্রত্যেকের আসনও নির্ধারণ করা ছিল।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, শাজাহানপুর উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেনের নাম আলাদা করে ঘোষণা করা হয়। এমনকি আওয়ামী লীগের কোনো নেতার নাম মাইকে ঘোষণা করা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, এ বিষয় নিয়ে একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা সঞ্চালক ইকবালের ওপর চড়াও হন। এর মধ্যেই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ওরফে রঞ্জু উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও পুলিশের উপস্থিতিতেই ইকবালের বুকে ধাক্কা দেন। এ নিয়েই শুরু হয় হট্টগোল। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে যান দলীয় কার্যালয়ে। পরে দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে।
ইউএনও ফুয়ারা খাতুন বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রথমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি রাকিবুল। তিনি ইকবালের কলার চেপে ধরেছেন। আরেক নারী সঞ্চালকের গায়েও হাত তোলা হয়েছে। তাঁদের গায়ে হাত তোলা মানে ইউএনওর গায়ে হাত তোলা। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।
উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সরকার বাদল বিএনপির সমর্থক। আর নতুন চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন আওয়ামী লীগের।
ইউএনও ফুয়ারা খাতুন আরও বলেন, নতুন উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে এভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার কথা নয়। এই বিষয়ে অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাকে কীভাবে অভিবাদন মঞ্চে ডাকা হবে, অনুষ্ঠান চালানো হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা সে সময় সম্মতিও দিয়েছেন। কিন্তু অনুষ্ঠানে এসে কথা রাখতে পারেননি নেতারা। অনুসারীরা উঠে যাওয়ার পর নেতারাও চলে গেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়নি, এ কারণে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন বের হয়ে এসেছে। আমার এখনো গেজেট হয়নি। সুতরাং আমি এর কোনো অংশ নই। আমি মঞ্চের ডানপাশে বসেছিলাম। লাঞ্ছিত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান বলেন, জাতীয় সংগীত হওয়ার সময় প্রটোকল ঠিক ছিল। কিন্তু পরে বর্তমান চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ দাওয়াত দিয়ে এনে নতুন চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করা হয়নি। উপজেলার সভাপতিসহ অন্য নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এ সময় ছাত্রলীগের ছেলেরা উঠে যায়। লাঞ্ছিত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলীপ কুমার চৌধুরী জানান, অনুষ্ঠানে মঞ্চে তাঁদের ডাকা হয়নি। এ কারণে নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে আসেন।
ইকবালকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে জানতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম ঘোষণা নিয়ে জটিলতার কারণে তাঁরা অনুষ্ঠান থেকে চলে গেছেন। তবে আমার জানামতে লাঞ্ছিত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’