শোকের শক্তিতে অদম্য পদযাত্রা

জাতীয় স্মৃতিসৌধ অভিমুখে পদযাত্রা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। প্রথম আলো
জাতীয় স্মৃতিসৌধ অভিমুখে পদযাত্রা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। প্রথম আলো

মহান স্বাধীনতা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রত্যুষে বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত ইতিহাসের পথরেখা ধরে শহীদ মিনার থেকে স্মৃতিসৌধের দিকে পায়ে হেঁটে এই যাত্রা শুরু হয়।

পর্বতারোহীদের সংগঠন অভিযাত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর যৌথভাবে ‘শোক থেকে শক্তি: অদম্য পদযাত্রা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পদযাত্রার আয়োজন করে।

ভোর ছয়টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে এই কর্মসূচির সূচনা হয়। তাতে আয়োজকদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক ও অভিযাত্রিকের উপদেষ্টা ইনাম আল হক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। মফিদুল হক বলেন, বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধাপে সেটি স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ নিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত পরিণতি পায়। ১৯৭১ সালেও মুক্তিযুদ্ধে একদল অভিযাত্রী দেশমাতার মুক্তির অভিপ্রায়ে ‘বিশ্ববিবেক জাগরণ’ শীর্ষক পদযাত্রা করে অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

ইনাম আল হক বলেন, হেঁটে শহীদ মিনার থেকে স্মৃতিসৌধের পথ অতিক্রম করার বিষয়টি কোনো প্রতিযোগিতার নয়, বরং অনুভবের, শ্রদ্ধার আর ভালোবাসার।

এরপর পদযাত্রী দল মুক্তির গান গাইতে গাইতে ২৫ মার্চের কালরাতের ভয়াল স্মৃতিবিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে গিয়ে সেখানে বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ সময় শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল পদযাত্রীদের সঙ্গে যুক্ত হন।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পরে জাফর ইকবাল বলেন, ‘এই দিনে আমরা অনেক বীর সন্তানকে হারিয়েছি। তাঁরা যে দেশটির জন্য জীবন দিয়েছেন, আমাদের প্রিয় সেই দেশকে আমরা সবাই মিলে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। তাহলে তাঁদের আত্মা শান্তি পাবে।’

পরে পদযাত্রী দলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের স্মৃতি চিরন্তনের পাশ দিয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সামনে দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসে। পরে আসাদ গেট এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ টাওয়ার-১-এর সামনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে অভিযাত্রী দল যায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। ভারতেশ্বরী হোমস ও তক্ষশীলার সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার পর সাড়ে নয়টার দিকে আবার পদযাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী যাত্রায় জাদুঘর থেকে জল্লাদখানা বধ্যভূমি, সেখান থেকে মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায় চটবাড়ি ঘাটে এবং শেষ হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে।