স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রায় খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইল বিএনপি

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শোভাযাত্রা আগে কথা বলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নয়াপল্টন, ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শোভাযাত্রা আগে কথা বলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নয়াপল্টন, ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি। স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রা হলেও নেতা-কর্মীদের স্লোগান আর প্ল্যাকার্ডে লেখার মূল দাবি ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি। আজ বুধবার বেলা তিনটায় বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শান্তিনগর হয়ে বিকেল চারটায় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রা হলেও বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছে দলটি। শোভাযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান।

শোভাযাত্রায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। এ ছাড়া জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, ট্রাক ও ভ্যান গাড়ি নিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। নেতা-কর্মীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা ছিল, এসবের মধ্যে ছিল‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। এ সময় দলটির নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেন ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘স্বাধীনতার অপর নাম, জিয়াউর রহমান’।

মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, তাঁতী দলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শোভাযাত্রায় অংশ নেন। ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত গোটা সড়কে দলটির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শোভাযাত্রায় দলটির নারী নেত্রীরা জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজ শাড়ি, জামা পরেছিলেন। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা-কর্মীরা টুপি ও টি-শার্ট পরে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া অনেকের মাথায় জাতীয় পতাকা বাঁধা ছিল।

শোভাযাত্রা শুরুর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পিকআপের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে প্রায় ৪৭ বছর হয়েছে স্বাধীনতা এসেছে, আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু এখনো কি আমরা স্বাধীন হয়েছি? আমরা এখনো স্বাধীন ও মুক্ত নই। একটা পাথর আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছে। আজকে আমাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের যে মুক্তচিন্তা, কথা ও লেখার স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে আওয়ামী লীগ তা হরণ করছে।’

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে শোভাযাত্রা বের করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শোভাযাত্রায় বিশাল আকৃতির দলীয় পতাকা নিয়ে নেতা-কর্মীরা। বিজয় নগর, ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে শোভাযাত্রা বের করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শোভাযাত্রায় বিশাল আকৃতির দলীয় পতাকা নিয়ে নেতা-কর্মীরা। বিজয় নগর, ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেত্রী, যিনি তাঁর সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। আজকে তাঁকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি খুবই অসুস্থ। তাঁকে চিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। আজকে আসুন, এই অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের মধ্যে দিয়ে দেশে যারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায়, তাদের আমরা অপসারিত করি। সব দল-মতনির্বিশেষ ঐক্য সৃষ্টি করি। আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি। একই সঙ্গে আমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করি। আজকে এই দিনে এই হোক আমাদের শপথ ও অঙ্গীকার।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে উড়াল-সেতুর নিচে একটি পিলারের গোড়ায় দাঁড়িয়ে পড়েন। এ সময় দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও পিলারের গোড়ায় দাঁড়ান। এ সময় মহাসচিব কথা বললেও উচ্চ শব্দ থাকার কারণে কিছু বোঝা যায়নি। পরে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিয়ে সেখান থেকে নেমে যান।

আজকের শোভাযাত্রাকে ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। পাশাপাশি সাদাপোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দেখা গেছে। শোভাযাত্রা থেকে কোনো আটক বা গ্রেপ্তারের ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

শোভাযাত্রায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীসহ দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।