একটি টিনের ঘরে দুই বিদ্যালয়ের পাঠদান

করিম মোল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে একটি কক্ষে। ১১ মার্চ দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
করিম মোল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে একটি কক্ষে। ১১ মার্চ দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো
>

* দুটি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে একটি টিনের ঘরে
* বিদ্যালয়ের জায়গা নদীগর্ভে বিলীন
* চারটির শিক্ষা কার্যক্রমের এই হাল

একটি টিনের ঘর। সেই ঘরে করিম মোল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটির কার্যক্রম চলছে। ঘরটিতে দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোনো রকমে বসিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার দিন দিন কমছে।

যে বিদ্যালয় দুটির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চল চরকাটারী ইউনিয়নের বোর্ডঘর বাজার এলাকায় অবস্থিত। শুধু এ দুটি বিদ্যালয়ই নয়, বোর্ডঘর বাজারের পাশে করিম মোল্লার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চর গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে আরও দুটি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে একটি টিনের ঘরে। বিদ্যালয়ের জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয় চারটির শিক্ষা কার্যক্রমের এই হাল।

১১ মার্চ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, চরকাটারী বোর্ড বাজার এলাকায় একটি টিনের ঘরে করিম মোল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। জায়গা না হওয়ায় গাদাগাদি করে বেঞ্চ বসানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের। অবশ্য বিদ্যালয় দুটির শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও খুব কম।

করিম মোল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, করিম মোল্লা পাড়া গ্রামে অবস্থিত এই বিদ্যালয় তিন বছর আগে নদীতে ভেঙে যায়। এরপর কয়েক মাস বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এরপর থেকে একটি মাদ্রাসার ঘরে দুটি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। এই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. বাহারুল ও চতুর্থ শ্রেণির আমেনা আক্তার বলে, এক ঘরে দুটি বিদ্যালয়ের ক্লাস হওয়ায় গাদাগাদি করে বসতে হয়। পড়ালেখায় মনোযোগ দিতেও সমস্যা হয়।

১১ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে দুজন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে মাত্র নয়জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিক আল-কবির বলেন, নদী ভাঙার পর নতুন জায়গা ও অবকাঠামো পাওয়া যায়নি। পাঠদান করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে তাঁদের।

ওই দিন বেলা একটার দিকে করিম মোল্লার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চর গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটিতেও একই চিত্র দেখা যায়। সেখানে একটি ঘরে বিদ্যালয় দুটির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। ওই বিদ্যালয় দুটিতেও উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল কম।

করিম মোল্লার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল বারেক বলেন, নদীভাঙনের কারণে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এক ঘরে দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে সম্প্রতি তাঁর বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

বাজারের দোকানঘরে বিদ্যালয়

চরকাটারী নতুন বাজারের একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে যমুনা চরকাটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নদীভাঙনের কারণে নিজস্ব জমি এবং অবকাঠামো নির্মাণের অর্থ না থাকায় দোকানঘরে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়।

১১ মার্চ বেলা দুইটার দিকে দেখা যায়, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির পাঁচজন, চতুর্থ শ্রেণির পাঁচজন এবং পঞ্চম শ্রেণির তিনজন শিশু ছোট দোকান ঘরে ক্লাস করছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিনি আলম বলেন, বাজারের এই দোকানঘরে শিশুদের ক্লাস নেওয়ার মতো কোনো পরিবেশ নেই। প্রচণ্ড গরমে শিশুরা ক্লাস করতে চায় না। সবচেয়ে বড় সমস্যা বিদ্যালয়ের কোনো শৌচাগার নেই। বাজারেও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, এই দোকানঘরের সঙ্গেই অন্য একটি ঘরে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জুয়ার আসর বসে। জুয়াড়িরা স্থানীয় চর এলাকা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে যান। জুয়াড়িদের কারণে শিক্ষকেরা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীরা অস্বস্তিতে থাকে।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুনীল কুমার কর্মকার বলেন, জুয়া চলার সময় সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আবারও সেখানে অভিযান চালানো হবে।

দৌলতপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সন্ধ্যা রানী সাহা প্রথম আলোকে বলেন, নদীভাঙনের কারণে বিদ্যালয়গুলোর এ পরিস্থিতির শিকার। নদীভাঙনের শিকার বিদ্যালয়গুলোর তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের জায়গা ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে।